সম্ভাবনার নতুন হাতছানি মাস্কে – DW – 24.04.2021
  1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সম্ভাবনার নতুন হাতছানি মাস্কে

সুলাইমান নিলয় ঢাকা
২৪ এপ্রিল ২০২১

করোনা শুরুর পর পালে হাওয়া লেগেছে দেশের মাস্ক ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর উৎপাদন ও রপ্তানিতে৷ ভেঙেছে পুরনো রেকর্ডও৷ তবে উৎপাদকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের পক্ষে এই খাতে আরো অনেক ভালো করা সম্ভব৷

https://p.dw.com/p/3sVGn
Bangladesch | Coronavirus | Maskenproduktion der PRAN-RFL Group
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের কারখানায় মাস্ক উৎপাদন হচ্ছে৷ ছবি: PRAN-RFL Group

দেশের অন্যতম বড় শিল্পগ্রুপ প্রাণ আরএফএল৷ করোনা আসার আগেও এই গ্রুপ উৎপাদন করতো সার্জিক্যাল মাস্ক৷ সেই উৎপাদন-ক্ষমতা এখন পাঁচগুন বেড়েছে৷ তবে এরপরেও এখনো রপ্তানিতে যেতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি৷

প্রাণ আরএফএলের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘‘আমরা স্থানীয় বাজারেই দিচ্ছি৷'' রপ্তানিতে যেতে হলে আরো বেশি উৎপাদন করতে হবে মত তার৷

২০২০ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে, অর্থাৎ, করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে কটন মাস্ক উৎপাদন শুরু করে ক্লিফটন গ্রুপ৷ এই গ্রুপের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এমডিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে জানান, তারা এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ লাখ পিস কটন মাস্ক অ্যামেরিকা ও ক্যানাডায় রপ্তানি করেছেন৷

ওয়ার্ক অর্ডার পেলে তারা মাসে মিলিয়ন ডজন মাস্ক সরবরাহ করতে পারবেন বলে দাবি তার৷

‘আমরা স্থানীয় বাজারেই দিচ্ছি’

তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-র তথ্য মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৫০ কোটি ১০ লাখ ডলারের মাস্ক রপ্তানি করেছে৷ চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৭ মাসে রপ্তানি হয়েছে ৪০ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের মাস্ক, যা আগের অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি৷

ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই)তৈরি করতে সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপ৷ তারা সাভারে ২৫ একর জমিতে স্থাপন করেছেন পিপিই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক৷ দক্ষিণ এশিয়ায় এরকম আর কোনো শিল্প পার্ক নেই বলে দাবি এই প্রতিষ্ঠানটির৷ আনুষ্ঠানিকভাবে ফেব্রুয়ারিতে এই পার্কটির যাত্রা শুরু হলেও বেক্সিমকো গত বছরও বড় আকারে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী রপ্তানি করেছিল৷

চ্যালেঞ্জ কোথায়?

বিজিএমইএ পরিচালক মোহাম্মদ নাছির বলেন, ‘‘মাস্কের তৈরিতে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি৷ তবে রপ্তানি আরো ভালো হতে পারতো৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা মনে করেছিলাম, মাস্কের মার্কেট বড় একটা মার্কেট হবে৷ অনেক উদ্যোক্তা মেশিন এনে ফ্যাক্টরি বানিয়েছে৷ আমরা গার্মেন্ট খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক দেশ৷ তাই আমরা মনে করেছিলাম, আমরা অন্তত ১-২ বিলিয়ন ডলারের ওয়ার্ক অর্ডার পাবো৷’’

এক্সপারটাইজ, টাইমলি শিপমেন্ট, কোয়ালিটি-কোনোটার সমস্যাই বাংলাদেশে নেই- এমন দাবিও করেন তিনি৷

তিনি বলেন, ‘‘কিন্তু এরপর দেখা গেল, খুব বেশি অর্ডার এখানে আসেনি৷ বিভিন্ন দেশের আমদানিকারকরা পুরনো সোর্স থেকেই পণ্য নিয়েছেন৷''

আস্তে আস্তে হয়ত বাংলাদেশে অর্ডার আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ অর্ডার এলে আস্তে আস্তে ক্যাপাসিটিও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি৷

অর্ডার না এলে উদ্যোক্তারা বেশি ঝুঁকি নেবে না, বলেন মোহাম্মদ নাছির৷

ক্লিফটন গ্রুপের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এমডিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘‘এখানে মূল চ্যালেঞ্জটা আসলে সার্টিফিকেশনের৷ সার্জিক্যাল মাস্ক চাইলেই কেউ রপ্তানি করতে পারবে না৷ এর জন্য ইউরোপ অ্যামেরিকার নানা জায়গা থেকে সার্টিফিকেশন পেতে হবে৷’’

তার মতে, এসব সার্টিফিকেশন এক সময় খুব সহজে পাওয়া যেতো৷ তখন চীনে এটার একটা ভিত্তি গড়ে উঠেছিল৷ তার ভিত্তিতেই তারা করোনার সময় বিপুল পরিমাণ রপ্তানি করতে পেরেছে৷ কোনো প্রতিষ্ঠান আগে হয়ত দুটো মেশিনে বানাতো৷ এখন একই সার্টিফিকেশনের অধীনে আরো ২০টা মেশিন বসিয়ে বানায়৷''

তিনি বলেন, এছাড়া পিপিই উৎপাদনে কারখানার মান নিয়ন্ত্রণের মাপকাঠি আলাদা৷ তার মানে, সার্টিফিকেশন পেতে হলে আপনাকে নতুন কারখানাই বানাতে হবে৷

পুরনো অভিজ্ঞতা থাকার কারণেই চীন-ভিয়েতনাম মাস্ক রপ্তানিতে আরো ভালো করেছে বলে মনে করেন প্রাণ আরএফএলের পরিচালক কামরুজ্জামান কামালও৷

তিনি বলেন, ‘‘এমনকি আমাদের এখানেও যে মাস্ক আমরা ব্যবহার করতাম, সেটাও আমরা ওখান থেকেই আমদানি করতাম৷’’

মাস্ক-পিপিই দিয়ে রপ্তানির ক্ষতিপূরণ সম্ভব?

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় ছিল ৪০ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ কয়েকমাস করোনাভাইরাসের কবলে পড়ে দেশের অর্থনীতি৷ এতে এই অর্থবছরে রপ্তানি আয় দাঁড়ায় ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ অথচ এই অর্থবছরে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার৷

রপ্তানি আয় কমার এমন ঘটনা বাংলাদেশে এর আগে ঘটেছিল ২০০১-২০০২ অর্থ বছরে৷ সেই বছরে ৫ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি করে বাংলাদেশ, এর আগের বছর যা ছিল ৬ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার৷ এরপর বিশ্ব অর্থনীতি নানা সময়ে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে৷ কিন্তু বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বেড়েছে ধারাবাহিকভাবে৷

‘রপ্তানি আরো ভালো হতে পারতো’

রপ্তানি আয় কমার বড় কারণগুলোর একটি হচ্ছে, পোশাক খাতে রপ্তানি আয় কমে যাওয়া৷ ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয় ছিল ২৭ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ কম৷

করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার আগের পৃথিবীর মাস্কের অর্ধেক উৎপাদন করতো চীন৷ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর চীন তা বহুগুন বৃদ্ধি করে৷ গত বছরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে চীন কেবল ২২৪ বিলিয়ন পিস মাস্ক রপ্তানি করেছে৷ ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ আরো ১৫ বিলিয়ন ডলারের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী রপ্তানি করেছে দেশটি৷

এই সময়ে ভিয়েতনামও বেশ ভালো করেছে৷ দেশটি ২০২০ সালে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন মাস্ক রপ্তানি করেছে৷

ক্লিফটন গ্রুপের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এমডিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী মনে করেন, মাস্কের বাজার অনেক বড় হলেও সার্টিফিকেশন না থাকার কারণে বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠান উৎপাদন ক্ষমতা থাকলেও এখন মাস্ক রপ্তানি করতে পারবে না৷

যারা কটন মাস্ক তৈরি ও রপ্তানি করছে, তারাও এটা থেকে খুব বেশি টাকা আনতে পারবে বলে মনে করেন না তিনি৷

তিনি বলেন, ‘‘এটার দাম আসলে খুবই কম৷ আমরা দাম পাচ্ছি না৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য