লকডাউন নয়, মাস্কে ভরসা! – DW – 21.03.2021
  1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লকডাউন নয়, মাস্কে ভরসা!

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২১ মার্চ ২০২১

বাংলাদেশে করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ অব্যাহত আছে৷ শনাক্তের হার আবারো শতকরা ১০ ভাগ ছাড়িয়েছে৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তাব থাকলেও লকডাউনের কথা ভাবছে না সরকার৷ তার বদলে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে সরকার কঠোর হবে৷

https://p.dw.com/p/3qw5v
ফাইল ছবিছবি: Reuters/M. Ponir Hussain

বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছেন৷ এই ধারা শুরু হয়েছে গত ১৮ মার্চ থেকে৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে রোববার, ২৪ ঘণ্টায় মোট দুই হাজার ১৭২ জন শনাক্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ২২ জন৷ সেখানে ১ মার্চ আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৮৫ জন, মারা গেছেন ৮ জন৷

সে হিসেবে চলতি মাসের ২১ দিনেই করোনার সংক্রমণ বেড়েছে চারগুণ, আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু বেড়েছে প্রায় তিনগুন৷ এই সময়ের মধ্যে পরীক্ষার বিপরীতে করোনা রোগী শনাক্তের হার চার দশমিক তিন-এক থেকে বেড়ে হয়েছে ১০ দশমিক দুই-নয় ভাগ৷ তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে আক্রান্তদের মৃত্যুর হার প্রায় একই রকম আছে৷

এ অবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১২ দফা সুপারিশ দিয়েছে, যার মধ্যে লকডাউনের পরামর্শও রয়েছে৷ তবে সরকারের চিন্তা অন্য৷ ‘‘আমরা মনে করি মাস্ক ও সামাজিক দূরত্বই হলো করোনা ঠেকানোর প্রধান উপায়৷ মাস্ক, মাস্ক এবং মাস্ক,’’ ডয়চে ভেলেকে বলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মান্নান৷

ডা. মুশতাক হোসেন

সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ

করোনার সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতির জন্য স্বাস্থ্যবিধির প্রতি মানুষের উদাসীনতাকেই প্রধানত দায়ী বলে মনে করেছেন সরকারি সংস্থা আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন৷ তিনি বলেন, ‘‘নভেম্বরে করোনা বেড়ে যাওয়ার পর সার্বিক চেষ্টায় তা কমে আসে৷ এরপর লোকজন মনে করতে শুরু করে করোনা আর আসবে না৷ ফেব্রুয়ারিতে টিকা দেয়া শুরুর পর এই মনোভাব আরো প্রবল হয়৷ মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব মানা বলতে গেলে উঠে যায়৷ ফলে সংক্রমণ আবার বাড়ছে৷ আর গরম এসে যাওয়ায় মানুষ ফ্যান ব্যবহার করছে, যা করোনা ছড়িয়ে দেয়৷ করোনার নতুন ভেরিয়েশনও হয়েছে৷’’

করোনা সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য বিএসএমইউ'র সাবেক উপাচার্য এবং ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘শীতের সময় দেশীয় অন্যান্য ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে৷ তখন তারা করোনাকে ঢুকতে বাধা দিয়েছে৷ ফলে শীতে সংক্রমণ কম ছিল৷ এখন শীত চলে গেছে৷ দেশীয় ভাইরাস শরীরে নাই, তাই করোনা সংক্রমণ বাড়ছে৷’’ তার মতে, যুক্তরাজ্য থেকে বাংলেদেশে প্রবেশ করা করোনার নতুন ধরনও সংক্রমণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে৷ তবে সেটি কতটা বিস্তৃত হয়েছে তা গবেষণার বিষয়৷ তিনিও স্বাস্থ্যবিধি না মানাকেই প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন৷

লকডাউনের পরিকল্পনা নেই

পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১২ দফা সুপারিশ পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়ে৷ তাতে শর্তসাপেক্ষে লকডাউনসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যবিধির কথা বলা হয়েছে৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর লকডাউনের সুপারিশ করলেও বিশেষজ্ঞদের অনেকে এর পক্ষে নন৷ আগের লকডাউনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘প্রথমে না বুঝেই অনেক কিছু আমরা করেছি৷ লকডাউন করতে হলে মানুষকে খাবার পৌঁছে দিতে হবে৷ আমাদের এখানে সেটা সম্ভব নয়৷’’

আবদুল মান্নান

লকডাউন আরোপের পরিকল্পনা নেই সরকারেরও৷ স্বাস্থ্যসচিব আবদুল মান্নান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত লকডাউনের কোনো চিন্তা নাই৷’’ তার বদলে স্বাস্থ্যবিধিগুলো মানার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করছে সরকার৷ ‘‘আমরা মাস্ক এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছি৷ মাস্ক ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না৷ সামাজিক অনুষ্ঠান, বিয়ে এসব ব্যাপারের সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে৷ গণপরিবহণ, রাস্তাঘাট সবখানে৷ কোনো ছাড় দেয়া হবে না৷ মোবাইল কোর্ট নামানো হয়েছে৷ জরিমানা করা হবে৷ আমরা মনে করি মাস্ক ও সামাজিক দূরত্বই হলো করোনা ঠেকানোর প্রধান উপায়৷ মাস্ক, মাস্ক এবং মাস্ক৷’’

তবে শুধু বাহিরে কড়াকড়ি আরোপ করেও করোনার বিস্তার ঠেকানো সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ তাদের মতে ঘরের ভিতরেও মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে৷ ডা. মুশতাক হেসেন বলেন, ঘরোয়া অনুষ্ঠানেও যে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হয় তা অনেকেই বুঝতে পারছেন না৷ যেমন, কোরাস গান গাওয়া যাবে না৷ একজনকে গান গাইতে হবে৷ একটি বদ্ধ ঘরে মাস্ক পরেও অনেক লোক বেশিক্ষণ থাকতে পারবেন না৷আইইডিসিআর এ সংক্রান্ত একটা নির্দেশনা সিভিল সার্জনদের পাঠিয়েছে৷

এদিকে বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী ৩০ মার্চ খোলার কথা রয়েছে৷ তবে শিক্ষামন্ত্রী গত সপ্তাহে বলেছেন জাতীয় কমিটির কাছ থেকে আবার মতামত নেয়া হবে৷ ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘এনিয়ে আমাদের সাথে সোমবার বৈঠক আছে৷ সংক্রমণ শতকরা ১০ ভাগের বেশি হলে আমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিরুদ্ধে৷ এরইমধ্যে ১০ ভাগ ছাড়িয়ে গেছে৷’’

এ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত পাঁচ লাখ ৭০ হাজার ৭৭৮ জন শনাক্ত হয়েছে৷ মারা গেছেন আট হাজার ৬৯০ জন৷ ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে ৪৭ লাখ ৬০ হাজার ৭৪৭ জন করোনার টিকা নিয়েছেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান