‘এখনো প্রকাশ করার অনেক কিছু আছে, মিডিয়া সব প্রকাশ করছে না’ – DW – 21.09.2024
  1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘এখনো প্রকাশ করার অনেক কিছু আছে, মিডিয়া সব প্রকাশ করছে না’

২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক খান৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে সংবাদ মাধ্যমের অবস্থা নিয়ে৷

https://p.dw.com/p/4kve8
বাংলাদেশের একটি টিলিভিশন চ্যানেলে টক শো
বাংলাদেশে অধিকাংশ গণমাধ্যম সরকারের প্রচারমাধ্যম হিসাবে কাজ করে বলে মনে করেন অনেকেছবি: Ekattor tv

ডয়চে ভেলে: আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমের এখন পরিস্থিতি কী?

ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক খান: আগে যেটা ছিল সেটা তো ‘গদি মিডিয়া’৷ আগে তো বাংলাদেশে সেই অর্থে সাংবাদিকতা আমরা দেখিনি৷ সাংবাদিকতা যেটা একটা চ্যালেঞ্জিং, সেটা তো ছিল না৷ তবে এখন পর্যন্ত আমি তার কোনো পরিবর্তন দেখছি না৷ আগের মতোই৷ এখনো তো আমরা মিডিয়ায় অনেক কিছু দেখছি না৷ জানি না সরকারের এখানে ভূমিকা কী৷ মিডিয়া , সাংবাদিক যে ফ্রিডম এনজয় করে সেটা এখানো আসেনি৷ মনে হয় সেটা হতে আরো সময় লাগবে৷

কী বৈশিষ্ট্যের কারণে আগের এবং এখনকার মিডিয়া আপনার কাছে একই মনে হয়?

আমার মনে হয় আমাদের মিডিয়াগুলো আগে থেকেই প্রো-পাওয়ার হয়ে গেছে৷ সেল্ফ সেন্সরশিপ আরোপের যে প্রবণতা তৈরি হয়েছে, তা থেকে তারা বের হতে পারেনি৷ তারা আগের সরকারের অন্যায়-অনাচার চেপে রাখতো, প্রকাশ করতো না৷ আর এখনো প্রকাশ করার অনেক কিছু আছে, কিন্তু মিডিয়া সব কিছু প্রকাশ করছে না৷ এই যে মেরে ফেলা, মব জাস্টিস মিডিয়ায় ঠিক মতো আসছে না৷ তবে আমি মনে করি, যত সময় যাবে, মিডিয়া হয়ত আরো স্বাধীন হবে৷

তাহলে এখন সংবাদ মাধ্যম কি নিরপেক্ষভাবে সবকিছু প্রকাশ করছে না?
 

আপনি দেখেন লিঞ্চিং, মব জাস্টিস সবখানে হচ্ছে৷ এটা কেন হবে? এটা সংবাদমাধ্যমে আরো ডিটেইল আসা উচিত৷ সরকার, সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তো এখানে ব্যর্থতা বলবো না, বিচ্যুতি  আছে৷ আমার মনে হয়, প্যাটার্নগুলোর পরিবর্তন হয়নি৷ ক্ষমতায় এক সরকার আসবে, সরকার যাবে শুধু এটা হলেই তো হয় না৷
আপনি বলছিলেন মিডিয়ায় এখনো সেল্ফ সেন্সরশিপ আছে৷ এটা কেন? কোনো সমস্যা আছে?
মিডিয়া, মিডিয়া পার্সোনালদের মধ্যে এক ধরনের ভয় থাকে৷ সেই জন্য তারা সেল্ফ-সেন্সর করে৷ আর এর আগে যেটা হয়েছে, মিডিয়া উলঙ্গভাবে সরকারকে সমর্থন করেছে৷ এটা তো কোনো সাংবাদিকতা হতে পারে না৷

আগের ভয়ের অভিজ্ঞতা থেকে কি মিডিয়া এখনো সেল্ফ-সেন্সর করছে?
 

আমার মনে হয় আগের ভয়ের অভিজ্ঞতা থেকে তারা পর্যবেক্ষণ করছে৷ তারা  হয়তো একটু দেখে শুনে এগোতে চায়৷

আগে প্রাইভেট টেলিভিশনগুলো সরকার পরিচালিত বিটিভির নিউজ দেখাতে বাধ্য হতো৷ এখন তো সেই বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে৷

বিটিভির নিউজ বর্জন এক কথা, কিন্তু আমি মনে করি বিটিভির একটা নিউজ দেখানো উচিত৷ তারা তো ন্যাশনাল ব্রডকাস্টার৷ এটা বরং দেখালে মানুষ জানতে পারবে, বিটিভি কি দেখায় আর প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেলগুলো কী দেখায়৷ জনগণ বুঝতে পারতো যে পার্থক্যটা কোথায়৷

যাকে ‘বাতাবি লেবুর’ বাম্পার ফলনের টিভি বলা হয়, সেই বিটিভির এখন কী অবস্থা? কোনো উন্নয়ন হয়েছে?

বিটিভি তো আমি দেখি না৷ তারপরও আমার মনে হয় না যে, তেমন কোনো পরিবর্তন এসেছে৷ বিটিভি বঙ্গবন্ধু ন্যাশনালাইজ করেন৷ তারপর থেকেই এটা প্রো-পাওয়ার টেলিভিশন৷ সরকারের প্রচার যন্ত্র হিসেবে কাজ করছে৷ যারা যখন সরকারে ছিল, তারাই কেউই চায়নি যে বিটিভি স্বাধীনভাবে পরিচালিত হোক৷

ডিগনিটি ও বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে সাংবাদিকতা করতে হবে: ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক খান

ভয়ের একটা বিষয় তো ঢুকে গেছে৷ তাহলে করণীয় কী? অন্তবর্তী সরকারের কোনো সিগনাল দেয়ার দরকার আছে? প্রধান উপদেষ্টা তো স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা করতে বলেছেন৷

সরকারের সিগনাল দেয়ার বিষয় আছে৷ সরকার পেশাদার সাংবাদিকতা উৎসাহিত করবে, সহায়তা করবে৷ আগে কিন্তু চাপের মুখেও কেউ কেউ স্বাধীন সাংবাদিকতা করেছেন৷ আপনারা যেমন করেছেন৷ আপনারা পেরেছেন, কারণ, আপনারা প্রভাবশালী বিদেশি সংবাদমাধ্যমে কাজ করছেন৷ সরকার মিডিয়া পিপলের সঙ্গে যত বেশি ডায়ালগ করবে, আমার মনে হয় সংবাদ মাধ্যম তত স্বাধীনভাবে কাজ করতে পরবে৷

সরকার কিন্তু এখনো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, যেটা স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে অন্যতম বাধা, সেটা এখনো বাতিল করেনি৷ এটা বাতিলের দাবি ছিল সাংবাদিবসহ বিভিন্ন মহলের৷

আমার মনে হয় সরকারের এই আইনটি বাতিল করে দেয়া উচিত৷ আমি ভলতেয়ারের সেই কথাটা বিশ্বাস করি- আমি তোমার মতের সাথে ভিন্নতা পোষন করতে পারি, কিন্তু তোমার মত প্রকাশের জন্য আমার কল্লাটা দিয়ে দিতে পারি৷ এটাই সভ্য সমাজের নীতি৷ সরকারের এই ব্যাপারে এগিয়ে আসা উচিত৷

সম্পাদক পরিষদ  সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা না করে ঢালাও মামলার সমালোচনা করেছে৷ তারা চাটুকার সাংবাদিকতারও সমালোচনা করেছে৷

আমিও ঢালাও মামলার বিরোধিতা করি৷ এটা বৈষম্য হয়ে গেল না? আপনি বলছেন, আগের চেয়ে ভালো অবস্থার কথা৷ আগেও আমরা ঢালাও মামলা দেখেছি৷ এখনো সেটা হলে তো আর হলো না৷ এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে৷ আমরা মনে হয়, এই সরকার ভিন্নমত প্রকাশে ভয় পায় কিনা৷ ভিন্নমত আসুক না৷ ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে

‘দালাল সাংবাদিকের’ তালিকা প্রকাশ মুক্ত সাংবাদিকতার পথে বাধা? যে ‘দালাল’, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায়৷ মানুষ তাকে প্রত্যাক্ষাণ করবে৷ কিন্তু কোনো সংগঠন এই তালিকা প্রকাশ করতে পারে?

এভাবে কোনো তালিকা প্রকাশ আমি সমর্থন করি না৷ যে অপরাধী, তাকে আপনি আইনের মাধ্যমে ধরেন৷ ইনফর্মেশন অ্যাডভাইজার বলেছেন, যারা এর সঙ্গে জড়িত সাংবাদিক, লেখক, সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ একজন দায়িত্বশীল মানুষ এভাবে বলতে পারেন না৷ আপনি প্রমাণসহ ধরেন৷

সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ দায়ের না করে এভাবে কথা বললে তা সাংবাদিকদের জন্য আগের মতো ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করবে না?

এভাবে ঢালাও কথা, ঢালাও মামলা কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না৷ তাহলে তো আইনের শাসন হলো না৷
স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা কী করতে পারেন?

সাংবাদিকদের যে কোনো পরিবেশে ডিগনিটি ও বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে সাংবাদিকতা করতে হবে৷ আর এটা নিয়ে সরকারকে বলতে হবে৷ ডায়ালগ করতে হবে৷ স্বাধীন সাংবাদিকতার দাবি সব সময় জারি রাখতে হবে৷