‘আয়ুবের্দিক চিকিৎসায় ভালো ফল মেলে' – DW – 25.06.2018
  1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘আয়ুবের্দিক চিকিৎসায় ভালো ফল মেলে'

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৫ জুন ২০১৮

বাংলাদেশে চারটি চিকিৎসা পদ্ধতি স্বীকৃত৷ অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি, ইউনানি, আয়ুবের্দিক৷ আয়ুবের্দি চিকিৎসার নানা উত্তর দিচ্ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও নূরমজিদ আয়ুবের্দিক কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বাবুল আক্তার৷

https://p.dw.com/p/308vN
Still aus Beitrag Wochenserie Natürlich Heilen Ayurveda
ছবি: RB

ডয়চে ভেলে: আয়ুবের্দিক মূলত কী ধরনের চিকিৎসা?

ডা. এম বাবুল আক্তার: আয়ুবের্দিক মূলত দেশীয় চিকিৎসা৷ এই চিকিৎসা এসেছে মূলত আড়াই হাজার বছর আগে৷ হিন্দু ধর্মে অনেকগুলো বেদের মধ্যে অথর্ব বেদ বলে একটা বেদ আছে৷ জানা যায়, ওই অথর্ব বেদে আয়ুবের্দিক চিকিৎসার কথা বলা আছে৷

আয়ুবের্দিক চিকিৎসার সঙ্গে হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি বা ইউনানি চিকিৎসার পার্থক্য কী?

অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা এসেছে অনেক পরে৷ ১৭০০ খ্রিষ্টাব্দে বা তার কিছু আগে ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে৷ অন্যদিকে আয়ুবের্দিক চিকিৎসা এসেছে খ্রিষ্টপূর্বের সঙ্গে সঙ্গে৷ তখন অন্যান্য চিকিৎসাও ছিল৷ মজার ব্যাপার হলো, বাংলাদেশে চার ধরনের চিকিৎসাস্বীকৃত৷ এগুলো হলো আয়ুবের্দিক, হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি ও ইউনানি চিকিৎসা৷ এই চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো ভারতবর্ষে ছিল৷ কিন্তু অ্যামেরিকায় তখন আয়ুবের্দিক বা ইউনানি চিকিৎসা ছিল না৷ তাদের অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা ছিল৷ এটা যখন ভারতবর্ষে শুরু হয়, তখন থেকেই মূলত এই চিকিৎসার শুরু৷ আমি ভারতের গুজরাটের আয়ুবের্দিক ইউনিভার্সিটিতে পড়েছি৷ ভারতে আরো কয়েক জায়গায় এই ধরনের আয়ুবের্দিক বিষয়ে ইনস্টিটিউট হয়েছে৷ এরপর থেকেই দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কায় এই আয়ুবের্দিক চিকিৎসার উন্নতি শুরু হয়৷

ডা. বাবুল আক্তার, নূরমজিদ আয়ুবের্দিক কলেজের সহযোগী অধ্যাপক

বর্তমান যুগে অনেক আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে৷ সেক্ষেত্রে এই আয়ুবের্দিক চিকিৎসার কার্যকারিতা এখন কতুটুক?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গবেষণা করে দেখেছে আয়ুবের্দিক চিকিৎসার গুরুত্ব রয়েছে৷ কারণ, এখানে ওষুধ তৈরি হয় গাছ থেকে৷ যেমন ধরেন, কুইনাইন৷ এটা ম্যালেরিয়ার ওষুধ৷ এটা একটা গাছ থেকে তৈরি হয়৷ এখন যে কেমোথেরাপি দেয়া হয়, সেটাও একটা গাছ থেকে তৈরি ওষুধ৷ হ্যাঁ, এটা নয়নতারা গাছ থেকে তৈরি হয়৷ যতগুলো ‘ক্রনিক ডিজিজ' আছে তার সবগুলোর ওষুধই তৈরি হয় গাছ থেকে৷ লিভারের সমস্যা বা নারীদের যে গাইনি সমস্যা – এই চিকিৎসাগুলোতে মর্ডান মেডিসিনের তুলনায় আয়ুবের্দিক চিকিৎসা অনেক বেশি কার্যকর৷ অনেক গবেষণা হয়েছে এগুলো নিয়ে৷ সেখানে দেখা গেছে, অ্যালোপ্যাথি ওষুধ খেলে কোনো একটা রোগ তাৎক্ষণিকভাবে হয়ত সেরে যাচ্ছে৷ তবে পরে সমস্যা থেকেই যাচ্ছে৷ কিন্তু আয়ুবের্দিক চিকিৎসায় সে ধরনের কোনো সুযোগ নেই৷ যে রোগটা সারছে, সেটা একবারেই সেরে যাচ্ছে৷

Still aus Beitrag Wochenserie Natürlich Heilen Ayurveda
ছবি: RB

এই চিকিৎসার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমেছে না বাড়ছে?

নিঃসন্দেহে বাড়ছে৷ তাও কিছুটা না, বেশ বাড়ছে৷ বর্তমান সরকার আয়ুবের্দিক চিকিৎসার প্রতি বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে৷ ইতিমধ্যে আমাদের বেশ কিছু লোকের চাকরিও হয়েছে৷ প্রথম দফায় ৩০ জনের নিয়োগ হয়েছে সরকারি হাসপাতালগুলোতে৷ পরে আরো দেড় থেকে দুইশ' জনের চাকরি হয়েছে৷ থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজগুলোতে আমাদের মেডিকেল অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে৷ এতে আমাদের মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ হচ্ছে৷ তারাও আয়ুবের্দিক চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পারছেন৷ কারণ চারটি চিকিৎসা পদ্ধতি আমাদের দেশে স্বীকৃত৷ ভারতে কিন্তু এর জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় আছে৷ ভারতের সঙ্গে তুলনা করলে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি৷ আমাদের দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আয়ুবের্দিক বিষয়ে একটা সেল আছে৷ একজন ‘লাইন ডিরেক্টর' আছেন৷ তিনি এটা দেখাশোনা করেন৷ আমাদের একটা বোর্ডও আছে৷

আয়ুবের্দিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে সফলতার হার কেমন?

এই চিকিৎসায় সফলতার হার ভালো৷ যেমন ধরুন, কারও লিভারের সমস্যার জন্য আমরা যদি ওষুধ দেই তবে সেই রোগী অনেক ভালো বোধ করেন৷ আমরাও রোগীদের কাছ থেকে ভালো ‘ফিডব্যাক' পাই৷

আয়ুবের্দিক চিকিৎসা বেশি গ্রহণ করেন কোন বয়সি মানুষ?

হয়ত এমন কোনো গবেষণা আছে৷ কিন্তু সেটা দেখতে হবে৷ তবে সাধারণত শিশুরা আয়ুবের্দিক চিকিৎসা নিতে খুব একটা আসে না৷ মহিলারা বেশি আসেন৷ মধ্যবয়সিরাও আসেন, আবার বয়স্ক মানুষও আসেন৷ পেটের সমস্যা বা শ্বাসকষ্টে যাঁরা ভোগেন, তাঁরা আয়ুবের্দিক চিকিৎসা বেশি নেন এবং ভালো ফলও পান৷

বাংলাদেশে কত শতাংশ মানুষ আয়ুবের্দিক চিকিৎসা নেন, এমন কোনো গবেষণা আছে?

নিশ্চয়ই আছে৷ কিন্তু এই মুহূর্তে বলতে পারছি না৷

আয়ুবের্দিক চিকিৎসাকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে আপনার পরামর্শ কী?

আমার পরামর্শ হলো – সরকারের যথেষ্ট সদিচ্ছা থাকতে হবে৷ মানুষের সচেতনতা বাড়াতে হবে৷ পাশাপাশি বিজ্ঞাপন দিয়ে যারা প্রতারণা করছে, তাদের কঠোর হাতে দমন করতে হবে৷ আমি নিজে ওষুধ ফর্মুলা কমিটির সদস্য৷ ওষুধ কোম্পানিগুলো যখন ওষুধগুলো তৈরি করছে, তখন তারা যাতে সঠিক উপাদান দিয়ে সেগুলো তৈরি করে সেদিকে কঠোর নজর রাখতে হবে৷ আমি বলবো, পুরো মনিটরিং সিস্টেম আরো শক্ত ও কঠোর করতে হবে৷ পাশাপাশি আমাদের দেশে ওষধি গাছের চাষ বাড়াতে হবে৷ আমাদের আবহাওয়ায় যেসব গাছ লাগানো সম্ভব, সেগুলো আরো বেশি করে লাগাতে হবে৷ তাহলে ওষুধের দাম যেমন কমবে, পাশাপাশি জনগণ মানসম্পন্ন ওষুধও পাবেন৷

ডা. বাবুল আক্তারের সঙ্গে কি আপনি একমত? লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য