১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচনের আভাস বাংলাদেশ সেনাপ্রধানের – DW – 24.09.2024
  1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচনের আভাস বাংলাদেশ সেনাপ্রধানের

২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সংস্কার কাজ সম্পন্ন করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘যে-কোনো পরিস্থিতিতে' সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান৷

https://p.dw.com/p/4l1KG
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান
অন্তর্বর্তী সরকারকে সব ধরনের সহায়তার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধানছবি: DW

আগামী ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে, এমন আভাসও দিয়েছেন তিনি৷

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ঢাকায় নিজ কার্যালয়ে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান৷ সেখানে বর্তমান ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর অবস্থান নিয়ে বেশ কিছু কথা উঠে এসেছে৷

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং তার সৈনিকদের রাজপথে মোতায়েন করা হলেও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন দমনে সেনাবাহিনী সক্রিয় ভূমিকা নেয়নি৷ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর গণবিক্ষোভের মুখে ৫ আগস্ট প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন হাসিনা৷

রয়টার্সকে সেনাপ্রধান বলেন, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন আছে এবং সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার একটি পথের রূপরেখাও তৈরি হচ্ছে৷

তিনি আরো বলেন, ‘‘যাই হোক না কেন, আমি তার পাশে থাকবো৷ যাতে তিনি তার উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারেন৷''

বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের অগ্রদূত ড. ইউনূস ১৭ কোটি মানুষের দেশটিতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত করা এবং বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷

শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির কয়েক সপ্তাহ আগেই সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন ওয়াকার-উজ-জামান৷ রয়টার্সে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সংস্কারের পর এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে গণতন্ত্রের দিকে যাওয়া উচিত৷ তবে সবাইকে ধৈর্য্য ধরার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন তিনি৷

‘‘আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, তাহলে আমি বলব যে এই সময়সীমার মধ্যেই আমাদের একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করা উচিত৷''

বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি আগষ্টে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছিল৷

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে তিনি প্রতি সপ্তাহেই দেখা করেন এবং তাদের মধ্যে ‘খুব ভালো সম্পর্ক' রয়েছে বলেও জানান সেনাপ্রধান৷ একটি অশান্ত অবস্থার পর দেশকে স্থিতিশীল করতে সরকারের প্রচেষ্টাকে সেনাবাহিনী সমর্থন করে বলেও জানান তিনি৷

সেনাপ্রধান বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত যে আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি, তাহলে আমাদের ব্যর্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই৷''

জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলনে সংঘর্ষে এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন৷ কোটা সংস্কার আন্দোলন পরবর্তীতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে পরিণত হয়েছিল৷ স্বাধীনতার পর এটিই ছিল দেশটির সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের ইতিহাস৷

বিদ্রোহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ঘনবসতিপূর্ণ মহানগরী ঢাকার রাজপথ শান্ত হয়ে এসেছে৷ কিন্তু হাসিনার প্রশাসনের নাটকীয় পতনের পর সিভিল সার্ভিসের কিছু অংশ এখনও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি৷

প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার সদস্যের পুলিশবাহিনীতে এখনও শৃঙ্খলা ফিরে আসেনি৷ দেশব্যাপী আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালনের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে সেনাবাহিনী৷

শাস্তি এবং সংস্কার

রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ৷ ১৯৭৫ সালে শেখ হাসিনার বাবা এবং প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সামরিক শাসনের অধীনে আসে দেশটি৷

১৯৯০ সালে সামরিক শাসক হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়৷

২০০৭ সালে সামরিক বাহিনী আবার একটি অভ্যুত্থান ঘটায় এবং একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন জানায়৷ দুই বছর পর নির্বাচনে জিতে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত এই সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাংলাদেশ শাসন করেছিল৷

সেনাবাহিনীর পদাতিক অফিসার হিসাবে এই সময়গুলোতে দায়িত্ব পালন করেছেন ওয়াকার-উজ-জামান৷ তিনি জানিয়েছেন, তার অধীনে সেনাবাহিনী কোনো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করবে না৷

তিনি বলেন, ‘‘আমি এমন কিছু করব না যা আমার প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর হয়৷ আমি একজন পেশাদার সৈনিক৷ আমি আমার সেনাবাহিনীকে পেশাদার রাখতে চাই৷''

শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে প্রস্তাবিত ব্যাপক রাষ্ট্রীয় সংস্কারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেনাবাহিনীও তার অফিসারদের বিরুদ্ধে অন্যায়ের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখছে৷ বিশদ বিবরণ না দিলেও সেনাপ্রধান জানিয়েছে, এরই মধ্যে কয়েকজনকে শাস্তিও দেয়া হয়েছে৷

তিনি বলেন, ‘‘যদি কোনো কর্মরত সেনাসদস্য দোষী সাব্যস্ত হন, অবশ্যই আমি ব্যবস্থা নেব৷'' কিছু সামরিক কর্মকর্তা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরাসরি নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলোতে কাজ করার সময় দায়িত্বের বাইরেও কাজ করে থাকতে পারেন বলেও স্বীকার করেছেন তিনি৷

২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক গুম হয়ে থাকতে পারেন, এমন প্রায় ৬০০ জনের ঘটনা তদন্তের জন্য হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার৷

এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি সেনাসদস্যের এই বাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের সবচেয়ে বেশি সেনাসদস্য পাঠানো দেশগুলোর একটি৷ দীর্ঘমেয়াদে সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে রাখতে চান সেনাপ্রধান৷

তিনি বলেন, ‘‘এটি কেবল তখনই ঘটতে পারে যখন রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার কিছুটা ভারসাম্য থাকে৷ সেক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীকে সরাসরি রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখা যেতে পারে৷''

বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বর্তমানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে৷ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সাধারণত প্রধানমন্ত্রীই পালন করেন৷ জামান মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সম্ভাব্য সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়ায় এদিকেও নজর দেয়া যেতে পারে৷

তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘‘সামগ্রিকভাবে সামরিক বাহিনীকে কখনই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়৷ একজন সৈনিকের রাজনীতিতে জড়িত হওয়া উচিত নয়৷''

এডিকে/জেডএইচ (রয়টার্স)