দিল্লিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী – DW – 26.07.2013
  1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দিল্লিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি২৬ জুলাই ২০১৩

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির দিল্লি সফরের উদ্দেশ্য ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমা চুক্তি যাতে আর বিলম্বিত না হয়, তার চেষ্টা করা৷ মনমোহন সিং সরকার এ চুক্তি করতে কসুর করেনি, কিন্তু ভূখণ্ড হস্তান্তরের জন্য চাই অনুমোদন৷

https://p.dw.com/p/19EIN
ছবি: picture-alliance/dpa

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির দিল্লি আসা অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনে ভাষণ দেয়া হলেও, এ সফরের আসল লক্ষ্য ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমা চুক্তির বাস্তবায়নে যাতে আর দেরি না হয়, তার জন্য শেষ চেষ্টা করা৷ সেজন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশের অবস্থান তাদের বুঝিয়ে বলা যে, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে কেন এই চুক্তি দু'দেশের মৈত্রী সম্পর্কের পক্ষে জরুরি৷

এই চুক্তি রূপায়নের প্রধান সমস্য হলো, যেহেতু বিষয়টিতে ভূখণ্ড হস্তান্তরের প্রশ্ন জড়িত তাই এ জন্য সংবিধান সংশোধন করতে বিল আনতে হবে সংসদে এবং সেই সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ করাতে হবে সংসদের উভয়সভায় দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে৷ বলা বাহুল্য, এক্ষেত্রে বিরোধী দলগুলি ভোট দিতে নাও পারে৷ যদিও বিলটি ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে এবং সংসদের আসন্ন বাদল অধিবেশনে ঐ বিল পেশ করা হবে বলে ভারত-বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র সচিব স্তরের সাম্প্রতিক বৈঠকে ঢাকাকে সে কথা জানিয়ে দিয়েছে দিল্লি৷

Symbolbild Grenze Indien Bangladesh
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির দিল্লি সফরের উদ্দেশ্য ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমা চুক্তি যাতে আর বিলম্বিত না হয়, তার চেষ্টা করা (ফাইল ফটো)ছবি: AFP/Getty Images

স্থলসীমা চুক্তি নিয়ে বিরোধী দলগুলির আপত্তি কোথায়? ভূখণ্ড হস্তান্তরে যুক্ত ভারতের চারটি রাজ্য৷ আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গ৷ প্রধান বিরোধী দল বিজেপি ছাড়াও আপত্তি আছে আসামের এজিপি (অসম গণপরিষদ ) এবং পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের৷ বিজেপির যুক্তি: ২০১১ সালের ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমা চুক্তি অসম ও একপেশে৷ ভারতকে যেখানে ছাড়তে হবে ১৩ হাজার একর জমি, সেখানে বাংলাদেশ ছাড়বে মাত্র তিন হাজার একর৷ দশ হাজার একর বাড়তি জমির ক্ষতিপূরণ হবে কীভাবে? তাই সংসদে জমি জরিপের ম্যাপ পেশ করার পর তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার কথা বলেছে বিজেপি৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অবশ্য মনে করেন, এই চুক্তি কার্যকর করার রাজনৈতিক কৃতিত্বটা পুরোপুরি মনমোহন সিং সরকারকে ছেড়ে দিতে নারাজ বিজেপি৷

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মতে, বিষয়টি যতটা ভূখণ্ডের তার চেয়ে বেশি মানবিক৷ সেখানে থাকা মানুষজনদের অকথ্য দুঃখকষ্টের৷ সেখানে না আছে রাস্তাঘাট, না আছে পানীয় জল, না আছে শিক্ষা, চিকিৎসা আর বিদ্যুতের সুবিধা৷

একই রকম আপত্তি তৃণমূল কংগ্রেসের৷ ছিটমহল বিনিময়ে উত্তরবঙ্গের ১০ হাজার একর জমি চলে যাবে বাংলাদেশে৷ দ্বিতীয়ত, ছিটমহল বিনিময়ের পর দলে দলে শরণার্থী আসবে পশ্চিমবঙ্গে৷ তার বিপুল দায়ভার সামলাবে কে? সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির সম্মতি আদায় করাও এক সমস্যা হতে পারে কেন্দ্রের৷

Indien Premierminister Manmohan Singh Maoisten-Angriff
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংছবি: picture alliance/AP

সমস্যার শেষ এখানেই নয়৷ সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় সরকার পক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই৷ তাই বিলে বিজেপির সমর্থনের আশায় রাজ্যসভায় বিজেপি নেতা অরুণ জেটলির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ডা. দীপু মনি৷ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সলমান খুরশিদের সঙ্গে ব্যক্তিগত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কেও কাজে লাগাবেন তিনি৷

দুশ্চিন্তা উভয়দেশেরই৷ মনমোহন সিং সরকারের মতে, বাংলাদেশে নির্বাচনের দেরি নেই৷ সুতরাং, এই চুক্তি কার্যকর করার এটাই সঠিক সময়৷ শেখ হাসিনা সরকার নিরাপত্তসহ ভারতের স্বার্থ যেভাবে দেখে এসেছেন, তাতে এই চুক্তি রূপায়িত হলে ভোটে হাসিনা পাবেন বাড়তি সুবিধা৷ সংবিধান সংশোধন বিলের মাধ্যমে ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা-মুজিব স্থলসীমা চিহ্নিতকরণ এবং ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় চুক্তিকে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেয়া হবে৷ বৈধতা দেয়া হবে ২০১১ সালে ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সই হওয়া ছিটমহল হস্তান্তরকেও৷

উল্লেখ্য, ১৬২টি ছিটমহলের মধ্যে ১১১টি ভারতের এবং ৫১টি বাংলাদেশের৷ ঐ সব ছিটমহলে বসবাসকারী প্রায় ৫০ হাজার মানুষ তাঁদের ইচ্ছামতো জায়গায় থাকতে বা যেতে পারবে৷ আশঙ্কা, সংসদের এই অধিবেশনে সংবিধান সংশোধনী বিল যদি পাশ না হয়, তাহলে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা স্থলসীমা ইস্যু অনির্দিষ্টকালের জন্য হয়ে থাকবে ‘কফিনবন্দি'৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য