সংকটের আগে সংশয় – DW – 26.08.2019
  1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংকটের আগে সংশয়

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২৬ আগস্ট ২০১৯

আসাম সংশোধিত নাগরিকপঞ্জীর চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশিত হবে ৩১ আগস্ট৷ তার পর ঠিক কী হতে চলেছে, সে ব্যাপারে কোনও ধারণা নেই সাধারণ আসামবাসীর৷

https://p.dw.com/p/3OTHy
Indien National Register of Citizens | Assam, Einsicht in Entwurf
ছবি: Reuters

আসাম থেকে মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়নের জন্যই সেখানে নাগরিকপঞ্জীর সংশোধন শুরু হয়েছে— এই ধারণা প্রথম থেকেই ছড়িয়েছে বিজেপি৷ কিন্তু আসাম-প্রবাসী বাঙালিরা শুরু থেকে বলে আসছেন, এই নয়া নাগরিক তালিকা আদতে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যটি থেকে অভিবাসী বাঙালি ও অন্য রাজ্যের ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ চিহ্নিত করে বিতাড়নের ছক৷ সেখানে হিন্দু-মুসলমানের বিভেদ হবে না৷ ধর্মীয় পরিচয় নির্বিশেষে সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বাঙালিরা, যাঁদের অনেকেই কয়েক পুরুষ ধরে আসামের বাসিন্দা৷ এ নিঃসন্দেহে আসাম থেকে বাঙালি বিতাড়নের ছক, যা আসামে সেই আশির দশকেই শুরু হয়েছিল৷ কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে শান্তি চুক্তির সময়ও একই শর্ত দিয়েছিল আঞ্চলিক জঙ্গি সংগঠনগুলি৷ সেটাই এবার কার্যকর হতে চলেছে৷

৩১ আগস্ট সংশোধিত নাগরিকপঞ্জী প্রকাশিত হলে তার চেহারাটা কেমন হবে, সে নিয়ে আসামে কারো কোনো ধারণা নেই৷ বরং সংশয় ব্যাপক৷ কেউ বলছেন, যাঁরা বৈধ নাগরিক, তাঁদের তালিকা প্রকাশ হবে, কারো ধারণা, যাঁরা অবৈধ বাসিন্দা, তাঁদের তালিকা এবং এই সংশয়ের মধ্যেই আরও বিভ্রান্তিজনক খবর শোনা যাচ্ছে, যা হয়ত উদ্দেশ্যমূলক৷ যেমন স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, নাগরিকপঞ্জিতে নাম তুলতে মরিয়া আসামের হিন্দু বাঙালিরাই বেশি নথিপত্র জাল করে জমা দিয়েছেন৷ সেসব এবার ধরা পড়বে৷

শোনা যাচ্ছে, বাংলাদেশ সীমান্তের জেলাগুলিতে, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম, তাঁদের নাম নাকি বাদ পড়েনি৷ কিন্তু আসামের যেসব জেলায় ভূমিপুত্র অসমীয়ারাই সংখ্যাগুরু, সেখানে বহু বাঙালির নাম বাদ পড়েছে৷ অন্যদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা নাকি নির্বিবাদে আসামের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে যাচ্ছেন এবং বসতি গড়ে তুলছেন৷ এই সব খবরের মধ্যেই আসামের বিজেপি নেতারা ক্রমাগত হুঙ্কার দিয়ে যাচ্ছেন, একজন মুসলমান অনুপ্রবেশকারীও রেহাই পাবে না!৷

এই নাগরিকপঞ্জি আসামের বাঙালিদের সঙ্গে বিরাট বড় এক প্রতারণা: তপোধীর ভট্টাচার্য

আসলে এই নাগরিকপঞ্জি আসামের বাঙালিদের সঙ্গে বিরাট বড় এক প্রতারণা৷ ডয়চে ভেলেকে বললেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য৷ এই বাঙালিবিরোধী চক্রান্তের বিরুদ্ধে তিনি এবং সমমনস্ক সহ নাগরিকেরা দীর্ঘদিন ধরে সচেতনতা প্রসারের চেষ্টা করছেন৷ কিন্তু তাতে ভরসা জোগানো যাচ্ছে না৷ কারণ আসামের বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীকে নানাভাবে ভয় দেখানো, হেনস্থা করা চলছে৷ যাঁদের নাম নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনা, তাঁদের ট্রাইবুনালের দ্বারস্থ হতে হবে৷ যে ট্রাইবুনালে বাঙালিদের অসমীয়া ভাষায় প্রশ্ন করা এবং জবাব চাওয়া হচ্ছে বলে খবর৷ উদ্দেশ্য খুব পরিষ্কার৷ যত বেশি সম্ভব ‘‌বিদেশি'‌কে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া৷ প্রথম থেকে যেটা উদ্দেশ্য ছিল নাগরিকপঞ্জি সংশোধনের নামে এই লোকদেখানো সরকারি প্রক্রিয়ার৷

সুতরাং ৩১ আগস্টের পর এক চূড়ান্ত সংকট তৈরি হতে চলেছে আসামে, যার ভয়াবহতা এখনও অজানা৷