শনাক্তকরণ কাজে এআই ব্যবহার মধ্যপ্রাচ্যে আশঙ্কার কারণ – DW – 24.08.2023
  1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শনাক্তকরণ কাজে এআই ব্যবহার মধ্যপ্রাচ্যে আশঙ্কার কারণ

২৪ আগস্ট ২০২৩

মধ্যপ্রাচ্যে ডিজিটাল বায়োমেট্রিক শনাক্তকরণ পদ্ধতির ব্যবহার বাড়ছে৷ এই পদ্ধতি দমনকাজে ব্যবহৃত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/4VWdn
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবিছবি: FAYEZ NURELDINE/AFP

গত মে মাসে খালাফ আল-রোমাইথি নামের এক ব্যক্তি তার ছেলের স্কুল খুঁজতে তুরস্ক থেকে জর্ডান গিয়েছিলেন৷ কিন্তু সেখানে ডিজিটাল বায়োমেট্রিক শনাক্তকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করে তাকে গ্রেপ্তার করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঠানো হয়৷ সেখানে এখন তিনি ১৫ বছরের জন্য কারাভোগ করছেন৷

৫৮ বছর বয়সি আল-রোমাইথি তুরস্কের পাসপোর্ট নিয়ে জর্ডান গিয়েছিলেন৷ কিন্তু আম্মান বিমানবন্দরের ডিজিটাল বায়োমেট্রিক শনাক্তকরণ পদ্ধতি তার চোখের আইরিশ শনাক্ত করে তিনি যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি সেটি চিহ্নিত করে৷ ২০১৩ সালে আরব আমিরাতের নেতৃত্বের সমালোচনা করা ৯৪ ব্যক্তির বিচার করা হয়েছিল৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, ঐ বিচার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল৷ 

বেসরকারি সংস্থা ‘এমিরেটস ডিটেইনিস অ্যাডভোকেসি সেন্টারের' পরিচালক হামাদ আল-শামসি আইরিশ স্ক্যান করে আল-রোমাইথির গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন৷ তবে তার বায়োমেট্রিক তথ্য কীভাবে জর্ডানের কাছে গেল সে ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত নয়৷ তবে শামসির ধারণা, আরব আমিরাত এই তথ্য জর্ডানকে দিয়েছিল৷

এ ব্যাপারে জার্মানিতে জর্ডান ও আরব আমিরাতের কাছে জানতে চেয়েছিল ডয়চে ভেলে৷ তবে উত্তর পাওয়া যায়নি৷

মধ্যপ্রাচ্যে ব্যক্তিগত বায়োমেট্রিক তথ্য কীভাবে ব্যবহৃত হতে পারে তার একটি প্রমাণ আল-রোমাইথির গ্রেপ্তার, বলেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ডেমোক্রেসি ওয়াচডগ ফ্রিডম হাউসের ইয়ানা গরোখোভস্কাইয়া৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা দমনমূলক সরকারগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার অংশ হিসেবে বায়োমেট্রিক প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহার নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন- যা আমরা মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়াতেও দেখেছি৷''

বায়োমেট্রিক পদ্ধতির সক্ষমতা খুব দ্রুত বাড়ছে৷ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এতে সহায়তা করছে৷ মুখের আকার, কানের পর্দা, নিশ্বাস নেয়ার ধরন, হাঁটা ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করেও এখন মানুষ শনাক্ত করা যাচ্ছে৷ ভবিষ্যতে মানুষ কীভাবে টাইপ করে, কীভাবে নাম সই করে এসব দেখেও শনাক্তকরণ সম্ভব হতে পারে৷

আরেকটি বিষয় হচ্ছে ‘রিমোট বায়োমেট্রিক আইডেন্টিফিকেশন' বা আরবিআই৷ স্পাই মুভিতে যেমন দেখা যায়, চলন্ত ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহার করে চোখ, কানের পর্দা ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে অনেক মানুষের মধ্যে সম্ভাব্য একজনকে খুঁজে বের করা হচ্ছে৷ এটিই হলো আরবিআই৷

মানবাধিকার কর্মীরা এই আরবিআই নিয়ে বেশি চিন্তিত৷

মধ্যপ্রাচ্যে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার বিষয়ে ২০২২ সালে ইউরোপিয়ান ইনস্টিটিউট অফ দ্য মেডিটেরানিয়ানের প্রকাশ করা এক গবেষণার লেখকেরা বলেছেন, ‘‘বায়োমেট্রিক শনাক্তকরণ পদ্ধতির ব্যাপক ব্যবহার, দুর্বল গোপনীয়তা আইন এবং দুর্বল আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষা কর্তৃত্ববাদী অপব্যবহারের দ্বার উন্মুক্ত করে- যার শক্তি এআই-এর কারণে সম্ভবত আরও বাড়বে৷''

বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশ ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় বায়োমেট্রিক তথ্য ব্যবহার করছে৷

সাম্প্রতিক সময়ে দুবাই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মীদের অহংকার করতে দেখা গেছে৷ কারণ তারা কানের আকার পরীক্ষা করে একজন প্রতারককে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছিলেন৷ এছাড়া পুরো শরীর ঢাকা মেয়েদের পোশাক পরা এক পুরুষকে তার হাঁটার ধরণ ও শরীরের মাপ পরীক্ষা করেও ধরতে সক্ষম হন দুবাই বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা৷

নাগরিক নিবন্ধনের অংশ হিসেবে কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করেছে৷ আর ইরাক ও ইয়েমেন ভোটার নিবন্ধনের জন্য এসব তথ্য নিয়েছে৷

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব তথ্য অন্য উদ্দেশ্যেও ব্যবহৃত হতে পারে৷ ব্রাসেলসের ইউরোপিয়ান ডিজিটাল রাইটস নেটওয়ার্কের সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার এলা ইয়াকুবোভস্কা বলছেন, ‘‘যে কোনো সরকার একটি শহরের সিসিটিভি ফুটেজের সঙ্গে নাগরিকদের বায়োমেট্রিক তথ্য ব্যবহার করতে দিতে পারে৷ তাহলে আপনি লাইভ দেখতে পারবেন কেউ সাংবাদিকের সঙ্গে দেখা করছে কিনা, কেউ সমকামী বারে যাচ্ছে কিনা, কেউ রাজনৈতিক বিরোধী বা ভিন্নমতাবলম্বীদের সঙ্গে মেলামেশা করছে কিনা- যা খুব বিপজ্জনক হতে পারে৷''

তিনি বলেন, বায়োমেট্রিক তথ্য খুব সংবেদনশীল৷ এটি পাসওয়ার্ডের মতো নয় যে, যখন খুশি তখন পরিবর্তন করা যাবে৷

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সামাজিক প্রভাব নিয়ে গবেষণা করা সংস্থা এআই নাউ ইনস্টিটিউটের পরিচালক আমবা কাক আরবিআই (রিমোট বায়োমেট্রিক আইডেন্টিফিকেশন) পদ্ধতির উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা চান৷ গোপনীয়তা আইন বা অন্য কোনো আইন এক্ষেত্রে সহায়ক হবে না বলে মনে করেন তিনি৷

ক্যাথরিন শায়ের/জেডএইচ