লকডাউনের প্রভাবে এবার সস্তার ইলিশ? – DW – 13.06.2020
  1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লকডাউনের প্রভাবে এবার সস্তার ইলিশ?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৩ জুন ২০২০

ভারতে এই মরশুমে হতে পারে ইলিশের প্লাবন৷ দীর্ঘ লকডাউনের ফলে জল দূষণমুক্ত৷ বন্ধ মাছের চোরাশিকার৷ এর ফলে প্রচুর ইলিশ মেলার সম্ভাবনা রয়েছে৷

https://p.dw.com/p/3diZ5
ভারতে হতে পারে ইলিশের প্লাবন
ফাইল ছবিছবি: Imago/UIG

বাঙালির রসনার সবচেয়ে সেরা উপকরণ তর্কাতীতভাবে ইলিশ মাছ৷ দুই বাংলাতে বিপুল জনপ্রিয় জলের রুপোলি শস্য৷ বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণে ইলিশ পাওয়া গেলেও এই বাংলা বঞ্চিত থাকে৷ লকডাউনের জন্য এবার পরিস্থিতি আলাদা৷ করোনা সংক্রমণ রুখতে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে ভারতে লকডাউন শুরু হয়েছে৷ এতে জলের দূষণ অনেকটাই কমেছে৷ শিল্প কারখানা উৎপাদন বন্ধ ছিল৷ এছাড়া বড় বড় জাহাজ বন্দরে না আসার ফলে মাছের গতি প্রতিহত হয়নি অন্য বছরের মতো৷ ইলিশের দল সমুদ্র থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে নদীর মিষ্টি জলে ডিম পাড়তে আসে, সেই সময় সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দেদার চোরাশিকার চলে৷ খোকা ইলিশ তুলে নেওয়ার ফলে বাজারে বড় মাছ পাওয়া যায় না৷ লকডাউনের ফলে নিষেধাজ্ঞা সর্বাত্মকভাবে কার্যকর হওয়ায় মাছ শিকার করা সম্ভব হয়নি৷ সমুদ্রে ট্রলার যায়নি দিনের পর দিন৷ একই সঙ্গে এ বছর বর্ষার আগমনের আগে ভালো বৃষ্টি হচ্ছে দক্ষিণবঙ্গে৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বৃষ্টির পরিমাণ কম হলে অনেক সময় ইলিশের পরিযান পিছিয়ে যায়৷

লকডাউন থাকায় প্রকৃতি দূষণ থেকে রক্ষা পেয়েছে প্রায় তিন মাস৷ তার উপর ঘূর্ণিঝড়ের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে৷ মৎস্যবিজ্ঞানী শিবকিঙ্কর দাস বলেন, ‘‘আমফানের জন্য সমুদ্রের তলার পুষ্টিকর জল উপরে উঠে এসেছে৷ এতে আরও সুবিধা হয়েছে মাছের প্রজনন ও বৃদ্ধিতে৷ দিঘায় জলের রং হয়েছে সবুজ৷ তীরের কাছে দেখা গিয়েছে বড় মাপের ইলিশ৷ উত্তরবঙ্গের নদীতেও বাংলাদেশের রুটে ইলিশ এসেছে৷’’ ৯ এপ্রিল থেকে মাছ ব্যবসা সংক্রান্ত গতিবিধির উপর নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা-সহ অন্যান্য নির্দেশ জারি থাকায় দূষণমুক্ত থেকেছে নদী-সমুদ্র৷

শিবকিঙ্কর দাস

রাজ্য মৎস্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর রাজ্যে ইলিশের উৎপাদন ছিল মাত্র ৫ হাজার মেট্রিক টন৷ অথচ মরশুমে ইলিশের গড় উৎপাদনের পরিমাণ ১৪-১৫ হাজার মেট্রিক টন হওয়া উচিত৷ ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারমেন অ্যাসোসিয়েশন-এর সহকারী সম্পাদক বিজন মাইতির আশা, সবমিলিয়ে এবার ইলিশের উৎপাদন ২০ হাজার মেট্রিক টনের উপরেও পৌঁছাতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘লকডাউন আর মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা মিলিয়ে দীর্ঘদিন নদী ও সমুদ্রে ভুটভুটি, ট্রলার, এমনকি জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় জলে দূষণের মাত্রা অনেকটাই কম৷ জলযান না থাকায় নষ্ট হয়নি ইলিশের প্রিয় খাদ্য ভাসমান প্ল্যাঙ্কটনও৷ তাই ইলিশের ঝাঁক আসবেই৷’’

বর্ষা আসার সঙ্গে সঙ্গে ইলিশ ধরতে যাওয়ার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে৷ লকডাউনের দীর্ঘ ১০০ দিন পর নৌকা ও ট্রলারে পড়েছে রঙের পোঁচ৷ পূর্ব মেদিনীপুরের পেটুয়াঘাট মৎস্য বন্দর লকডাউনের শূন্যতা ঝেড়ে ফেলে আবার সরগরম হয়ে উঠেছে৷ ইলিশের জাল বোনার কাজও ইতিমধ্যেই শেষ৷ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি ও মুর্শিদাবাদের প্রায় দেড় থেকে দু'লক্ষ মানুষ নৌকা, ভুটভুটি ও ট্রলার নিয়ে ১৫ জুন বের হবেন ইলিশ শিকারে৷ পাশাপাশি সেদিনই খুলে যাচ্ছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরের পাইকারি মাছবাজার৷ আড়ত মালিকরাও মনে করছেন, ইলিশ ব্যবসা এবার ভালোই হবে৷

যেহেতু এখন রপ্তানিরও সুযোগ নেই, তাই রাজ্যের বাজারে ইলিশের জোগান থাকবে বিপুল৷ অতিরিক্ত জোগানের ফলে দাম সস্তা হবে৷ এক কেজির ইলিশ এ বছর আর হাজার টাকা কেজিতে কিনতে হবে না, এমনটাই আশা করা হচ্ছে৷ পরিবেশের স্বার্থে ফি বছর লকডাউন চান অধ্যাপক শিবকিঙ্কর দাস৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রকৃতি ছুটি পেয়েছে, তাই এবার ইলিশ প্রাপ্তির সম্ভাবনা বেশি তৈরি হয়েছে৷ প্রতি বছরই একটা নির্দিষ্ট সময় লকডাউন হোক৷ আর্থিক ক্ষতি এড়িয়ে প্রয়োজনে রাতের দিকে লকডাউন হোক, তাহলে এতদিন যা সর্বনাশ হয়েছে তা থেকে আমরা অনেকটা বেরিয়ে আসতে পারব৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য