‘মিয়ানমারের কথায় বিশ্বাস নাই’ – DW – 25.10.2017
  1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মিয়ানমারের কথায় বিশ্বাস নাই’

২৫ অক্টোবর ২০১৭

নোবেলজয়ী অং সান সু চি'র সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ বৈঠকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারীদের (রোহিঙ্গা) ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সু চি৷ তবে বিশ্লেষকরা আস্থা রাখতে পারছেন না৷

https://p.dw.com/p/2mUHE
ছবি: Bangladesh Home Ministry

মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফেরত নিতে রাজি৷ এজন্য ৩০ নভেম্বরের মধ্যে দুই দেশ একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করবে৷ পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে কাজ করছে বলে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছে মিয়ানমার সরকার৷

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দু'দিনের সফরে মঙ্গলবার মিয়ানমার গেছেন  প্রথম দিনে সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া হবে৷ আর এজন্য ৩০ নভেম্বরের মধ্যে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে৷ ওই বৈঠকে মিয়ানমার কোফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নেও সম্মত হয়েছে৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু সংবাদ মাধ্যমকে এসব তথ্য জানান৷

Bangladesch  Asaduzzaman Khan  Aung San Suu Kyi
ছবি: Bangladesh Home Ministry

মঙ্গলবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে দু'দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে দু'টি সমঝোতা স্মারকও সই হয়েছে৷

এদিকে বুধবার সকালে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি'র সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারীদের (রোহিঙ্গা) ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সু চি৷

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু জানিয়েছেন, ‘‘এক ঘণ্টার ওই বৈঠকে সু চি জানিয়েছেন, কোফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে তাঁর সরকার কাজ শুরু করেছে৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পাঁচটি প্রস্তাব এবং কোফি আনান কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতেই অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে৷’’

‘সু চি যা বলেছেন তা নতুন কিছু নয়’

তবে বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং স্টেট কাউন্সিলর সুচি যা বলেছেন, তা নতুন কিছু নয়৷ অতীতেও তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার কথা বলেছেন৷ কিন্তু নেয়নি৷ একদিকে তারা ফেরত নেয়ার কথা বলছে, অন্যদিকে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ অব্যাহত রেখেছে৷ এটা দ্বিপাক্ষিক আলোচনার নামে মিয়ানমারের সময় ক্ষেপনের একটি কৌশল৷ বাংলাদেশের উচিত হবে, জাতিসংঘের মাধ্যমে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা৷’’

আর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘৭০ বা ৯০-এর দশকে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন এবং এবারের নির্যাতনের ঘটনায় কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে৷ এবার জাতিগত নিধন বা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের যথেষ্ঠ প্রমাণ আছে৷ তাই বিশ্বের অনেক দেশ এবং জাতিসংঘ সেচ্চার হয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অষ্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের আরো অনেক দেশ এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র অবরোধের দিকে যাচ্ছে৷ একটি দেশের বিরুদ্ধে তো আর অবরোধ করা যায় না৷ তাই যারা এই জাতিগত নিধনে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অবরোধ আরোপ করছে যুক্তরাষ্ট্র৷’’

‘মিয়ানমার দুটি - একটি সু চির মিয়ানমার আরেকটি সামরিক বাহিনীর’

তিনি বলেন, ‘‘এখন মিয়ানমার চাপে আছে, তাই তারা দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধানের কথা বলবে৷ কিন্তু বাংলাদেশের উচিত হবে দ্বিপাক্ষিক এবং আন্তর্জাতিক দুইভাবেই চাপ সৃষ্টি করা৷ আর দুই দেশ চাইলেও এখন আর বিষয়টি দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে নাই৷’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘মিয়ানমার দু'টি৷ একটি সু চি'র মিয়ানমার, আরেকটি সামরিক বাহিনীর মিয়ানমার৷ সু চি'র মাধ্যমে সামরিক বাহিনীকে চূড়ান্ত চাপে ফেলতে হবে৷ আর ফেরত নেয়ার কথা বললেই তো হবে না৷ রাখাইনে রোহিঙ্গারা তাঁদের আবাসভূমিদে যাতে নিরাপদে এবং স্বাধীনভাবে ফিরতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে৷’’

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আসছে মিয়ানমারের ওপর :

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সংঘটিত জাতিগত নিধনের প্রতিবাদে মিয়ানমারের ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ রাখাইনের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে অবরোধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে৷ রাখাইনে রোহিঙ্গা নিপীড়নের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করা হয় ওই বিবৃতিতে৷

ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, দেশটি এখন সামরিক সহায়তা প্রত্যাহারের কথা ভাবছে৷ পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র হেদার নরেট বিবৃতিতে বলেন, ‘‘আমরা রাখাইনের ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন৷ হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের শাস্তি হওয়া উচিত৷'' বিবৃতিতে বলা হয়, এই হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত ও দায়ী যে কোনো সরকারি ও বেসামরিক ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনতে হবে৷’’

এই হত্যাযজ্ঞে জড়িত নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও জারি করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র৷ হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত ও দায়ী যে কোনো সরকারি ও বেসামরিক ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনার কথাও জানানো হয়েছে৷

বিবৃতিতে সহিংসতার শিকার এলাকাগুলোতে জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়৷ নরেট বলেন, ‘‘মিয়ানমার সরকার ও তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে, মানবিক সহায়তা দিতে সংস্থাগুলোকে অনুমোদন দিতে হবে এবং যারা পালিয়ে গেছে তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে৷’’

এর আগে গত সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের দুর্দশার জন্য মিয়ামারের সেনাবাহিনীকে দায়ী মনে করে যুক্তরাষ্ট্র৷

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...