‘বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত অক্সফামের’ – DW – 12.02.2018
  1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত অক্সফামের’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

হাইতি এবং চাড-এ যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগে চাকরি হারানো রোলান্ড ফান হাউয়ারমেইরেন-কে কেন বাংলাদেশে পাঠানো হলো? এ প্রশ্ন তুলে মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন, বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত অক্সফামের৷

https://p.dw.com/p/2sXqy
ছবি: picture alliance/AP Photo/N. Ansell

অক্সফামের শীর্ষ কর্মকর্তা রোলান্ড ফান হাউয়ারমেইরেন হাইতি এবং চাড-এ যৌনকাজে নারীদের ব্যবহারের অভিযোগে চাকরি হারানোর পর অ্যাকশন এগেইনস্ট হাঙ্গারের বাংলাদেশ মিশনের প্রধান হয়েছিলেন৷ ৬৮ বছর বয়সি ওই কর্মকর্তা ২০১২ থেকে ২০১৪ মেয়াদে, অ্যাকশন এগেইনস্ট হাঙ্গারের বাংলাদেশ মিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বলে জানিয়েছে বেশ কয়েকটি ব্রিটিশ গণমাধ্যম৷ এর আগে অক্সফামের হয়ে হাইতিতে তিনি কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করতেন৷ দেশটিতে থাকাকালে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগে পদ হারান৷ তারপরও হাঙ্গারের বাংলাদেশ প্রকল্পের প্রধান হতে তাকে কোনো বাধার মুখে পড়তে হয়নি৷ ফরাসি দাতব্য সংস্থা অ্যাকশন এগেইনস্ট হাঙ্গার বলছে, ‘খোঁজ-খবর নিয়েই' তারা নিয়োগ দেয়া হয়৷ তারা দাবি করে,‘‘‘অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গারের পক্ষ থেকে অক্সফামের কাছে ফান হাউয়ারমেইরেনের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হলেও কোনো সতর্কতা দেয়নি তারা৷'' সংস্থার একজন মুখপাত্র বলেন, ‘‘অক্সফাম তার অনৈতিক কর্মকাণ্ড, অভ্যন্তরীণ তদন্তের ফলশ্রুতিতে তার পদত্যাগের কারণ সম্পর্কে আমাদের বলেনি৷ উপরন্তু তার সঙ্গে কাজ করা অক্সফাম কর্মীদের, যাদের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগের একজন ছিলেন, তার কাছ থেকে আমরা ইতিবাচক বার্তা পেয়েছিলাম৷'' যদিও একই সময়ে তার বিরুদ্ধে অক্সফাম নিজস্ব তদন্ত চালাচ্ছিল৷ ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে যান ফান হাউয়ারমেইরেন৷ 

Sultana Kamal - MP3-Stereo

শুক্রবার ব্রিটেনের দ্য টাইমস এক প্রতিবেদনে অক্সফামের কর্মকর্তা ফান হাউয়ারমেইরেনের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ প্রকাশ করে৷ অক্সফামেরই একটি গোপন তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে খবরটি প্রকাশ করা হয়৷ হাউয়ারমেইরেন শুধু যে হাইতির ভূমিকম্পপীড়িত নারীদের যৌন কাজে ব্যবহার করেছেন তা-ই নয়, অভিযোগ রয়েছে তিনি অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের একই  ধরনের কাজে বাধ্য করেছেন৷ হাইতিতে অসহায় নারীদের যৌন কাজে ব্যবহার করার অভিযোগের পর আফ্রিকার দেশ চাডেও একই অভিযোগ উঠেছে৷ ফলে দাতব্য সংস্থাটি বেশ চাপের মুখে রয়েছে৷ দাতাগোষ্ঠীগুলোও বিষয়টি নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে সংস্থাটির উপর চাপ দিচ্ছে৷ আর ব্রিটেনের পক্ষ থেকে পূর্ণ তদন্তের নির্দেশ ও অনুদান বন্ধের হুমকি দেওয়া হয়েছে৷

রোলান্ড ফান হাউয়ারমেইরেনকে ২০১১ সালে অক্সফাম থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়৷ আর সর্বশেষ অভিযোগ হলো হাউয়ারমেইরেনকে চাডে সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার সময় যৌন কর্মীদের সংস্থার অফিসে ভাড়া করে আনা হতো৷ এ কারণে ২০০৬ সালে সেখানকার অন্য এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়৷

চাডে সংস্থাটির সাবেক এক কর্মচারী ব্রিটেনের দ্য অবজারভারকে বলেন, ‘‘তারা পার্টি করার জন্য নারীদের আমন্ত্রণ জানাতেন৷ আমরা জানি, এসব নারী শুধু বন্ধু ছিল না, বরং অন্যকিছু ছিল৷'' তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি অক্সফামকে অনেক শ্রদ্ধা করতাম৷ তারা অনেক ভালো কাজ করেছে৷ কিন্তু এটা অনেক বিস্তৃত সমস্যা৷'' ​​​​​​ 

Jobaidur Rahman - MP3-Stereo

অক্সফামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘‘২০১১ সালে তদন্তের পর ঘটনাটি ভালোভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে৷ তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা দল তারপর বেশ কয়েকটি সুপারিশ করে৷ এর মাধ্যমে কর্মীদের সুরক্ষার পাশাপাশি যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ ও আগে ঘটনার পুনারাবৃত্তি ঠেকাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ তাছাড়া যে-কোনো অভিযোগের বিষয়েও করণীয় নির্ধারণ করা হয়৷'' তারা আরো বলে, ‘‘শুধু হাইতিতে ২০১১ সালে প্রায় ১০ হাজার এনজিও কাজ করেছে৷ তাই লাখ লাখ কর্মীদের মধ্যে যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িতরা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পায়নি এমনটা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়৷''

অক্সফামের প্রধান নির্বাহী মার্ক গোল্ডরিং ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি রেডিও ফোরের কাছে দাবি করেন, ‘‘ঘটনায় জড়িত কোনো কর্মচারী সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রদানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিষেধ করা হয়নি৷ জনগণের কাছ থেকে প্রকাশ্যে অনুদান নিয়ে চলা সংস্থার জন্য এমন ঘটনা খুবই লজ্জাজনক৷''

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে অক্সফামের এই কেলেঙ্কারির ঘটনায় পূর্ণ ও জরুরি তদন্ত করার জন্য দাতব্য সংস্থাগুলোকে নজরদারিকারী চ্যারিটিজ ওয়াচডগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে'র একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘আমরা চাই এসব মারাত্মক অভিযোগের ব্যাপারে চ্যারিটি কমিশনের পূর্ণ ও জরুরি তদন্তে অক্সফাম সব ধরনের তথ্য-প্রমাণ সরবরাহ করবে৷'' 

Bipin Gangadharan - MP3-Stereo

অক্সফাম বাংলাদেশের মিডিয়া অ্যান্ড  কম্যুনিকেশন কো-অর্ডিনেটর এ জে এম জোবায়েদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘রোলান্ড ফান হাউয়ারমেইরেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং তার চাকরিচ্যুতির বিষয়ে অক্সফাম বাংলাদেশকে কখনোই কিছু জানায়নি৷ এমনকি তিনি চাকরিচ্যুত হওয়ার পর অ্যাকশন এগেইনস্ট হাঙ্গারের বাংলাদেশ মিশন প্রধান হওয়ার ব্যাপারেও আমাদের কিছু জানানো হয়নি৷ আর আমরাও কিছু আগে জানতে পারিনি৷''

যৌন হয়রানির মতো বিষয়ে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে আপনারা সেটা প্রকাশ করেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা এইসব বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করি৷ আমাদের একটা কমিটি আছে৷ কোনো ঘটনা ঘটলে বা অভিযোগ পেলে কমিটি তদন্ত করে৷ দোষী সাব্যস্ত হলে চাকরিচ্যূত করা হয়৷ তবে সব ঘটনায় দায়ী ব্যক্তির নাম সব সময় প্রকাশ করা হয় না৷ এটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে৷''

অ্যাকশন এগেইনস্ট হাঙ্গার, বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ বিপিন গঙ্গাধরণ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রোলান্ড ফান হাউয়ারমেইরেন বাংলাদেশে আমাদের সংস্থার মিশন হেড ছিলেন৷ কিন্তু আমরা তার ব্যাপারে আগে এসব কিছু জানতাম না৷ এটা বাংলাদেশ থেকে চেক করারও সুযোগ নেই৷ আর তার যখন নিয়োগ হয়, তখন অক্সফাম আমাদের কিছু জানায়নি৷ তবে আমরা তার বাংলাদেশে অবস্থানের সময়ে তার বিষয়ে খতিয়ে দেখার জন্য বলেছি৷ যদি কিছু পাওয়া যায়, আমরা তা বিবেচনায় নেবো৷'' 

তার বাংলাদেশে অবস্থান কাল নিয়ে এখন অ্যাকশন এগেইনস্ট হাঙ্গার কোনো তদন্ত করবে বিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ওই সময়ে (২০১২-১৪) আমরা তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাইনি৷ তবে এই ঘটনার পর আমরা রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখছি৷ তাতে কোনো ত্রুটি আছে কিনা দেখছি৷ সেখানে কোনো ত্রুটি থাকলে আমরা তা আরো সংহত করব৷''

তবে মানবাধিকার কর্মী এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকোট সুলতানা কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অক্সফাম তাদের ঘোষিত নীতির বিরুদ্ধে কাজ করেছে৷ তারা শুধু তথ্যই গোপন করেনি, তারা যৌন হয়রানির জন্য দায়ী ব্যক্তিকে আড়াল করেছে৷ আর সেই ব্যক্তি আরেকটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে বাংলাদেশে কাজ করে গেছেন৷ ওই ব্যক্তির হাতে আরো অনেকের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিল৷''

তিনি বলেন, ‘‘অক্সফামের এখন দায়িত্ব হলো এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে তথ্য গোপনের জন্য যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এবং বাংলাদেশের কাছে অক্সফামের ক্ষমা চাওয়া৷'' তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকারের উচিত এই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করা৷''

অক্সফাম থেকে চাকরিচ্যুতির পর রোলান্ড ফান হাউয়ারমেইরেন বাংলাদেশে অ্যাকশন এগেইনস্ট হাঙ্গার নামে যে সংস্থার এ দেশীয় প্রধান ছিলেন, তারা প্রধানত কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের মধ্যে খাদ্য এবং চিকিৎসা সেবা নিয়ে কাজ করছেন৷ ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে তাদের খাদ্য এবং চিকিৎসা নিয়ে কাজ আছে৷