পশ্চিমবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক, বিপুল ক্ষয়ক্ষতি

হুগলি, হাওড়া, পশ্চিম ও পূর্ব মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বীরভূম, দুই বর্ধমান, নদিয়ায় বন্যা পরিস্থিতি রীতিমতো উদ্বেগজনক। জলে ভেসে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, গবাদি পশু। রাজ্য়ের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্য়ার ঘোলা জলের তলায়। বন্য়ার তাণ্ডবে লাখ লাখ মানুষ ভয়ংকর বিপদের মুখে পড়েছেন। হাওড়া, হুগলি ও মেদিনীপুরের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।

দামোদর, রূপনারায়ণ, কংসাবতী ও মুণ্ডেশ্বরী নদীর জল একাধিক জায়গায় বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। ফলে এই নদীর জলে বিশাল এলাকা ভেসে গেছে। অনেক জায়গায় রাস্তাঘাট ভেসে যাওয়ায় এবং প্রবল স্রোতে জল বইতে থাকায় উদ্ধারকারী দলের পৌঁছাতে অসুবিধা হচ্ছে। শিলাবতী, অজয় ও ভাগীরথীর জল বিপদসীমার কাছে রয়েছে। ফলে প্রশাসনের চিন্তা বেড়েছে।

ডিডাব্লিউ বাংলার দুই প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ এবং সুব্রত গোস্বামী হুগলি ও হাওড়ায় বন্যা পরিস্থিতি দেখতে গেছিলেন। তারা জানিয়েছেন, বেশ কিছু জায়গায় রাস্তা বলে আর কিছু নেই। সেখান দিয়ে বন্যার জল প্রবল বেগে বইছে। সেখান দিয়ে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে যেতে হয়েছে। উদয়নারায়ণপুরের দিকে সেতুর উপর দিয়ে জল বইতে থাকায় তারা সেখানে যেতে পারেননি।

জলের মধ্যে যে লাল রঙের জিনিসটা দেখা যাচ্ছে, সেটি আসলে একটি ভেসে যাওয়া ফ্রিজের অংশ। এই ছবি তোলার সময় সুব্রত দেখতে পান, কাছের একটি দোকান থেকে জলের তোড়ে একটি ফ্রিজ ভেসে যেতে শুরু করলো। সেটিই ক্যামেরাবন্দি করেছেন তিনি।

হাওড়া ও হুগলিতে ঘুরলেই চোখে পড়ছে এই দৃশ্য। রাস্তা বলে আর কিছু নেই। বন্যার জল রাস্তা ভেঙে দিয়েছে তাই নয়, সেখানে গভীর খাত তৈরি করে বইছে। এই জল একসময় নেমে যাবে। কিন্তু এই রাস্তা মেরামত করতে, অন্য ক্ষতি পূরণ করতে কতদিন লাগবে কে জানে!

বাড়িঘর ভেসে গেছে বন্যার জলে। রস্তায় উঠে আসতে হয়েছে প্রচুর মানুষকে। এখানেই সিলিন্ডার জ্বালিয়ে রান্না করছেন এই পরিবার। তারা সিলিন্ডার নিয়ে আসতে পেরেছিলেন বলে অন্তত রান্নাটা এইভাবে করতে পারছেন।

এই বাড়ির চারিদিকে বন্যার জল। মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন ছাদের উপরে। তারা অপেক্ষা করছেন জল কখন কমবে তার উপর। তারা অপেক্ষা করছেন সরকারি ত্রাণের।

হুগলির পুরশুড়ার এই বাড়ির অনেকটাই ভেঙে গেছে বন্যার ফলে। সেই ভেঙে পড়া বাড়ির ছাদের ভিতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে বন্যার জল।

বন্যাক্রান্ত এলাকায় সবচেয়ে বেশি চাহিদা পানীয় জলের। পুরশুড়ায় এই ট্রাকের ভিতরে যন্ত্রে পানীয় জল প্যাকেটে ভরা হচ্ছে। তারপর তা সরবরাহ করা হচ্ছে উপদ্রুত এলাকায়। কিন্তু পানীয় জলের চাহিদা পূরণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে।

বন্যার জলের তীব্র স্রোত রয়েছে। অনেক জায়গায় মানুষ জানাচ্ছেন, জল বাড়ছে। তারা একেবারে অপ্রস্তুত ছিলেন। অন্যসময় বন্যা হলে তা আগে থেকে বোঝা যায়। এবার সেটা হয়নি। সেজন্য তাদের বিপদ বেড়েছে।