‘পর্নোসাইটের তালিকায়’ সামহোয়্যারইন ব্লগ – DW – 22.02.2019
  1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘পর্নোসাইটের তালিকায়’ সামহোয়্যারইন ব্লগ

সমীর কুমার দে ঢাকা
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বিটিআরসি সম্প্রতি পর্নোসাইট বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে৷ বিটিআরসি থেকে তালিকা প্রস্তুত করে পাঠানো হচ্ছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের কাছে৷ তারা সেই তালিকা ধরে গেটওয়ে থেকে সাইটগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3Ds0c
ছবি: somewhereinblog.net

ওয়েবসাইট বন্ধ করার যে তালিকা গত বুধবার পাঠানো হয়েছে সেখানে দেখা গেছে সামহোয়্যারইন ব্লগ ও গুগল বুকসের নাম রয়েছে৷

সামহোয়্যারইন ব্লগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ‘ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ' আইএসপিএবি-র সভাপতি আমিনুল হাকিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা নির্দেশ পেয়েছি৷ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে সর্বশেষ যে তালিকা এসেছে সেখানে সামহোয়্যারের নাম আছে৷ আমরা সেটা বন্ধ করে দিয়েছি৷ তিন দিন বন্ধ ছিল তাই হয়তো অনেক আইএসপি এটা বন্ধ করতে পারিনি৷ শিগগিরই বন্ধ করে দেবে৷ আর গুগল বুকস যেটা বলা হচ্ছে, সেটা কিন্তু গুগলস বুকস ডট কম ডট বিডি৷ আসল যেটা গুগল বুকস ডট কম, সেটা চালু আছে৷ আমরা তালিকা অনুযায়ী বন্ধ করতে পারি শুধু৷ আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই৷''

‘পর্নো বলতে শুধুমাত্র ন্যাংটা ছবি বুঝি না’

অনেকগুলো জনপ্রিয় সাইটতো বন্ধ হচ্ছে? সেগুলো নিয়ে কেউ অভিযোগ করছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘হ্যাঁ, আমাদের কাছে অভিযোগ আসছে৷ কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই৷'' বিটিআরসিকে বিষয়টি জানিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে আমিনুল হাকিম বলেন, ‘‘না, আসলে বলা হয়নি৷ আসলে বিটিআরসিকে জানানোর প্রয়োজন মনে করিনি৷''

কী বলছেন আইসিটি মন্ত্রী?

বিষয়টি নিয়ে ডয়চে ভেলে কথা বলেছে ডাক টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সঙ্গে৷ তাঁকে জানানো হয়েছে, পর্নোসাইট বন্ধ করতে গিয়ে অনেকগুলো পপুলার সাইটও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ যেমন সামহোয়্যারইন ব্লগ, গুগল বুকস৷ কিন্তু এগুলো তো পর্নোসাইট না, তাহলে এগুলো বন্ধ হচ্ছে কেন? জবাবে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘‘নিশ্চয় কোনো কারণ আছে৷ নিশ্চয় অশ্লীল কোনো কনটেন্ট আছে৷ আমরা তো পর্নো বলতে শুধুমাত্র ‘ন্যাংটা' ছবি বুঝি না, যে কোনো কনটেন্ট লেখা কিংবা নাটক এরকম বহু জিনিস আছে যে সব জায়গাতে অনুচ্চারিত শব্দ ব্যবহার হয়৷ আমরা কিন্তু কেবলমাত্র ছবির পর্নোসাইট বন্ধ করছি না৷ অতএব কন্টেন্টের মধ্যে থাকতে পারে... ৷ সামহোয়্যারইন ব্লগ একসময় খুবই বিতর্কিত ব্লগ ছিল৷ এদের কনটেন্টগুলো শুধুমাত্র সরকারবিরোধী না, আরো জঘন্য ছিল৷ যে কোনো বিষয়ে যাকে তাকে যেখানে সেখানে আক্রমণ করত তারা৷ নাস্তিকতার জন্যও দায়ী ছিল তারা৷ সুতরাং এরকম কোনো কনটেন্টের জন্য এটা হতে পারে৷ ওভারঅল একটা সম্পূর্ণ নিরাপদ ইন্টারনেট চাই আমরা৷ আমরা ফেসবুক, ইউটিউবকে ধরবো৷ ইন্ডিভিজুয়াল অ্যাপস যেগুলো আছে সেগুলোও ধরব৷ আমাদের জন্য প্রতিজ্ঞা হচ্ছে শিশুর জন্য এটা নিরাপদ করে যাব৷'' 

‘আমরা সেটা বন্ধ করে দিয়েছি’

সামহোয়্যারইন ব্লগ একটি জনপ্রিয় ব্লগ, সেখানে অনেকে লেখালেখি করে - মন্ত্রীকে এই বিষয় জানানো হলে তিনি বলেন, ‘‘দেখেন সবচেয়ে বেশি পপুলার তো পর্নোসাইট৷ পপুলারিটি কোনো সংজ্ঞা না৷ যদি তাদের কোনো ত্রুটি না থাকে তাহলে তাদের বলতে হবে যে, আমাদের কোনো ত্রুটি নেই৷ তারা কমপ্লেইন করলে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাচাই করে দেখব? কিন্তু আমাদের এখানে এই কাজটা যারা করছে সেটা কিন্তু কোনো ব্যক্তি না৷ ৫/৬টা ইন্টেলিজেন্স উইং যাচাই-বাছাই করে তালিকাটা করছে৷ অতত্রব ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম৷''

এই পর্নোসাইটগুলো বন্ধ করা ছাড়া কি অন্য কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন আপনারা? জবাবে জনাব জব্বার বলেন, ‘‘নেব৷ এখন তো আমরা শুরু করলাম মাত্র৷ আমরা প্রতিদিন খুঁজে বের করছি, প্রতিদিন দেখছি আমাদের যেখানে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেগুলো নিচ্ছি৷ আমরা আগামী পাঁচ ছয় মাসের মধ্যেই একটা প্রকল্প বাস্তবায়ন করব৷ তখন প্রতিটা জিনিস আমরা টাচ করতে পারব৷ এখন তো অনেক কিছুই কাজ করতে পারছি না৷ আমরা এই সক্ষমতা অর্জন করার চেষ্টা করছি৷''

বইপত্রের কনটেন্টেও এই ধরনের বিষয় থাকার কথা জানালে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘‘বইপত্রের দায়িত্ব আমার না৷ বইপত্রের জন্য আলাদা কর্তৃপক্ষ আছে৷ আমার দায়িত্ব ডিজিটাল দুনিয়া৷ ডিজিটাল বাংলাদেশ বানাতে হলে ডিজিটাল দুনিয়া নিরাপদ করতে হবে৷ আমার জায়গা থেকে আমি যাত্রা শুরু করেছি৷ এখন তো শুধুমাত্র পর্নোসাইটগুলো বন্ধ করতে পারছি৷ এখন পর্যন্ত যা করেছি তা এক পারসেন্টও না৷'' 

‘অনেকগুলো এজেন্সি তালিকা করে আমাদের দিচ্ছে’

সামহোয়্যার.. এর বক্তব্য

তবে সামহোয়্যার ইন ব্লগের সম্পাদক ও সহ প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘বাংলাদেশে বাক স্বাধীনতা রুদ্ধ করতে চায় সরকার৷ সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই সামহোয়্যার ইন ব্লগের নাম তালিকায় রাখা হয়েছে৷ গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে সামহোয়্যার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে৷ এখানে প্রতিদিন ৬০ হাজার মানুষ ভিজিট করেন৷ ২ লাখ ১৩ হাজার ব্লগার এখানে রেজিষ্ট্রার্ড৷ এখানে এমন কোনো কনটেন্ট থাকে না, যে কারণে এটা পর্নোসাইটের তালিকায় পড়বে৷ কোনো লেখায় সমস্যা দেখলে সেটা বাদ দেওয়া হয়৷ সরকার এবারই প্রথম না যে, এটা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে৷ ২০০৫ সাল থেকে এই ব্লগটি চলছে৷ এখানে যে ধরনের লেখা থাকে, ফেসবুক-ইউটিউব বা টুইটারেও সে ধরনের কনটেন্ট থাকে৷''

বিটিআরসি'র চেয়ারম্যান জহুরুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অনেকগুলো এজেন্সি তালিকা করে আমাদের দিচ্ছে৷ সেই তালিকাই আমরা বন্ধ করার জন্য আইএসপিএবি'কে পাঠাচ্ছি৷ এর মধ্যে কেউ যদি নির্দোষ থাকে, তাহলে আমরা তাদের বলব, আপনারা আমাদের কাছে এসে বলুন, আপনি নির্দোষ হলে আমরা আপনার সাইটটি খুলে দেব৷''