‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস' – DW – 29.11.2012
  1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস'

দেবারতি গুহ২৯ নভেম্বর ২০১২

২৫শে নভেম্বর ছিল ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস'৷ ঘরে-বাইরে বা ব্যক্তিগত জীবনে নারীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্যই এ দিনটিকে বেছে নেয় জাতিসংঘ৷ অথচ আজও এর প্রকোপ কমেনি বিশ্বে৷

https://p.dw.com/p/16roe
ছবি: picture-alliance/dpa

অনেক দিন আগের কথা৷ ১৯৬০ সালের ২৫শে নভেম্বর ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে একটি বর্বরোচিত নির্যাতনের ঘটনায় তিনজন নারী নিহত হন৷ তারই জের ধরে ১৯৮১ সালের জুলাই মাসে, ল্যাটিন অ্যামেরিকার প্রথম নারী-অধিকার বিষয়ক সম্মেলনে ২৫শে নভেম্বর দিনটিকে নির্যাতন বিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷ এরপর ১৯৯৩ সালে ২৫শে নভেম্বর থেকে ১০ই ডিসেম্বর এই ১৬ দিনকে ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিবাদ পক্ষ' এবং ২৫শে নভেম্বরকে ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস' হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷ বলা হয়, ‘এমন কোনো কাজ যা নারীর দৈহিক, যৌন কিংবা মানসিক ক্ষতির কারণ হয় অথবা সামাজিক ও ব্যক্তিজীবনে নারীর স্বাধীনতাকে জোরপূর্বক হরণ করে – তাকেই নারীর প্রতি সহিংসতা বলে৷'

Margot Wallström UN Sonderberichtersttatterin
জাতিসংঘে নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তি মার্গট ওয়ালস্ট্র্যোমছবি: picture-alliance/dpa

এই সংজ্ঞায় ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সহিংসতাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷ এর মধ্যে পরিবারে নারীর প্রতি সহিংসতা, যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, নারী পাচার, জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি ইত্যাদি সবই স্থান পায়৷ অথচ আজ, এর প্রায় এক দশক পরেও বিশ্বের তিন ভাগের এক ভাগ নারী তাঁদের জীবনে হিংসাত্মক ঘটনার শিকার হন, হন বলপ্রয়োগ বা শ্লীলতাহানির শিকার৷

জাতিসংঘে নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তি মার্গট ওয়ালস্ট্র্যোম-এর কথায়, ‘‘নারী নির্যাতন ক্ষমতার এক নেতিবাচক প্রদর্শন মাত্র৷ নারীর ওপর এ এক জোরপূর্বক অধিকার আদায়ের পন্থা৷''

Symbolbild UNAMA Afghanistan
একবিংশ শতাব্দীতেও নারী নির্যাতন বাস্তব সত্যছবি: picture-alliance/dpa

দুঃখের বিষয় এটাই যে, এই নারীর কারণেই কিন্তু একটি সন্তান পৃথিবীর আলো দেখতে পায়, শুভ সূচনা হয় একটি সুন্দর জীবনের৷ অথচ নারীকে সেই সম্মানটুকু দিতেও আমাদের যেন মন চায় না৷ আমাদের সমাজে নারী-পুরুষ উভয়েই সমান অধিকারের অধিকারি৷ কিন্তু এই অধিকার কতটুকু পান নারীরা?

এখানেই শেষ নয়৷ অবাক করার মতো বিষয় হলেও, প্রায় সব ক্ষেত্রেই কিন্তু নারী নির্যাতনের প্রধান উৎস পরিবার৷ পারিবারিক অঙ্গনেই নির্যাতন ও নিপীড়নের সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটে৷ উদাহরণ হিসেবে মার্গট ওয়ালস্ট্র্যোম তুলে ধরেন কঙ্গোর কথা৷ তিনি বলেন, ‘‘যুদ্ধ-বিধ্বস্ত কঙ্গোতে নারী নির্যাতন একটি রোজকার ঘটনা৷ সেখানে নারীর যৌনতা হরণ করা, তার ওপর নির্যাতন, অত্যাচার করা একটা স্বাভাবিক ঘটনা৷ এটা যেন এক অস্ত্র৷ একটা সস্তা, অথচ কার্যকারী এক অস্ত্র৷''

Leute fliehen
‘যুদ্ধ-বিধ্বস্ত কঙ্গোতে নারী নির্যাতন একটি রোজকার ঘটনা’ছবি: DW

তবে শুধু কঙ্গোতেই নয়৷ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে ইউএনএফপিএ পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় যে, প্রতি দু'জন নারীর মধ্যে একজন নির্যাতনের শিকার হন৷ সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্টে বলা হয় যে, দক্ষিণ এশিয়ায় পারিবারিক নির্যাতনের হার সবচেয়ে বেশি৷ আর এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে ২৮তম অবস্থানে রয়েছে৷ শতকরা ৬০ ভাগ নারীই সেখানে তাঁদের বিবাহিত জীবনে নির্যাতনের শিকার হন৷ কিন্তু, নারী নির্যাতনকে ব্যক্তিগত সমস্যা মনে করে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় আছে কি? কারণ এর ভুক্তভোগী যে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র৷ তাছাড়া ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সামাজিক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, করপোরেশনগুলোও যে নারীর জবাবদিহিতার আওতায় পড়ে৷ তাই প্রচলিত রীতিনীতি, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির যে দিকগুলো নারীকে অবদমিত করে রাখে, সেগুলোকে শক্তভাবে প্রতিহত করতে হবে, ছুড়ে দিতে হবে চ্যালেঞ্জ৷

বলা বাহুল্য বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, পরিবর্তিত হচ্ছে সমাজ কাঠামো, বিকশিত হচ্ছে সভ্যতা৷ পরিবর্তনের হাওয়াও লাগছে মানুষের জীবনযাত্রায়৷ আশ্চর্য হলেও সত্য যে, এরপরও বন্ধ হয়নি নারীর ওপর নির্যাতন৷ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী এবং সমাজের উন্নয়নে তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য৷ কিন্তু তারপরও আজ তাঁরা শান্তি, নিরাপত্তা ও অধিকারের দিক দিয়ে এখনও যে পুরুষের সমকক্ষ নন!

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান