টাকা আদায়ে অপহরণ, অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলর – DW – 21.09.2024
  1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টাকা আদায়ে অপহরণ, অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলর

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দলীয় কার্যালয়ে বসে অপহরণের ছক। সেই অনুযায়ী ব্যবসায়ীকে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবি। এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে গ্রেপ্তার তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলর।

https://p.dw.com/p/4kvfH
তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকার সামনে হেঁটে যাচ্ছে এক ব্যক্তি
বারাসত পুরভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের কার্যালয়ে বসে মিলন অপহরণের ছক কষেন বলে অভিযোগ (ফাইল ছবি)ছবি: Avijit Ghosh/REUTERS

ত্রিপুরার এক ব্যবসায়ী এ রাজ্যে ব্যবসা করেন। তাকে অপহরণ করে দুষ্কৃতীরা। অপহৃত ব্যবসায়ীকে উদ্ধারের পর তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।

ব্যবসায়ী অপহৃত

ত্রিপুরা বাসিন্দা দেবব্রত বিশ্বাস পশ্চিমবঙ্গে ব্যবসা করেন। উত্তর ২৪ পরগনায় তার ব্যবসার কাজকর্ম চলে। এই দেবব্রতর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেই তাকে অপহরণের ছক কষা হয়। অভিযোগ, অপহরণকারী দলের মূল পান্ডা তৃণমূল নেতা মিলন সর্দার।

অপহরণ , তোলাবাজি, প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কাউন্সিলর মিলনের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে তাকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। শুক্রবার ব্যারাকপুর আদালত মিলনকে নয়দিনের জন্য সিআইডি হেফাজতে পাঠিয়েছে।

বারাসত পুরভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের কার্যালয়ে বসে মিলন অপহরণের ছক কষেন বলে অভিযোগ। তাকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বারাসতের তৃণমূল কাউন্সিলর কাকলি ঘোষদস্তিদার।

ব্যবসায়ী দেবব্রতকে দুই দফায় কিডন্যাপ করার অভিযোগ রয়েছে মিলনের বিরুদ্ধে। সেই সময় দেবব্রতর কাছ থেকে মোট নয় কোটি টাকা মুক্তিপণ নেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। প্রথম দফায় মুক্তিপণ হিসাবে ছয় কোটি টাকা, পরে তিন কোটি টাকা নেয়া হয়। এবার দুই কোটি ২৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল।

আগের দুই বার অপহরণ বা মুক্তিপণ দেয়ার কথা কেন পুলিশকে জানাননি ওই ব্যবসায়ী, এ নিয়ে ধন্দ রয়েছে। দেবব্রত ও মিলনকে মুখোমুখি বসিয়ে প্রশ্ন করতে পারেন গোয়েন্দারা।

২০১৫ সালে প্রথম বার বারাসত পুরসভায় কাউন্সিলর হন মিলন। সেবার তৃণমূলের টিকিটে জেতেন ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে। ২০২২ সালের নির্বাচনে দুই নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হন তিনি।

অভিযোগ, মিলন ব্যবসায়ীকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন। সেপ্টেম্বরের গোড়ায় দেবব্রতকে খড়দহের একটি আবাসনের পার্কিং লট থেকে অপহরণ করা হয়। এক পরিচিতের বাড়িতে এসেছিলেন ওই ব্যবসায়ী। সেই সময়ই অস্ত্র দেখিয়ে তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কয়েকজন। দেবব্রতকে আটকে রাখা হয় বারাসতের একটি আবাসনের ৪০২ নম্বর ঘরে।

ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে। সাত জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের জেরা করে মিলনের নাম উঠে আসে। ব্যবসায়ী উদ্ধার হওয়ার পর এলাকা থেকে চম্পট দিয়েছিলেন তৃণমূল কাউন্সিলর। ১৯ তারিখ বারাসতের বাড়িতে ফেরেন মিলন। সেই সময় অভিযান চালিয়ে তাকে হাতেনাতে ধরেন গোয়েন্দারা।

বাংলাদেশের পর ভারতের সব রাজনৈতিক দল সতর্ক: সুমন ভট্টাচার্য

কাউন্সিলরের সম্পত্তি

জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর মিলনের উত্থান চমকপ্রদ। তিনি সোনার কারিগর ছিলেন। কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর সেই কাজ ছেড়ে দেন। এরপর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সিআইডি সূত্রে খবর, গত কয়েক বছরে একাধিক জমি ও বাড়ির মালিক হয়ে উঠেছেন মিলন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আবাস যোজনায় সরকারি অনুদান দেয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম করেছিলেন মিলন। নিজের ওয়ার্ডে সরকারি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য শতাধিক গরিব মানুষের কাছ থেকে আট হাজার টাকা করেন নিয়েছিলেন তিনি।

দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও দ্বিতীয়বার কাউন্সিলর নির্বাচনের টিকিট পেতে অসুবিধা হয়নি মিলনের। তৃণমূল নেতৃত্ব বছরের পর বছর কি এ সব অনাচার দেখতে পাননি?

বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায় বলেন, "নিরীহ গোছের ছেলেটা চুপচাপ বসে থাকত। ওকে দেখে বোঝা যায়নি যে এমন কাজ করতে পারে। টিকিট দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে।"

বিরোধীদের দাবি, টাকা করে দিয়ে স্থানীয় নেতৃত্বকে বশে রাখতেন মিলন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, "কাকলি ঘোষদস্তিদারের সঙ্গে ২৫টি ভিডিও ও ছবি আছে মিলনের। ও এখানকার শাহজাহান।" কাকলির পাল্টা মন্তব্য, "অসত্য কথা বলছেন বিরোধী দলনেতা। নিজের পদের অমর্যাদা করছেন।"

বিভিন্ন স্তরের তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে অতীতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। শীর্ষ পর্যায়ের মন্ত্রী থেকে কাউন্সিলর বা পঞ্চায়েত সদস্যরা অভিযুক্ত হয়েছেন। আর্থিক নয়ছয়, তোলাবাজি, টেন্ডারে গরমিল সহ নানা অভিযোগ শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে উঠেছে। কিন্তু টাকা আদায়ের জন্য জনপ্রতিনিধির দ্বারা অপহরণের এই ঘটনা অভূতপূর্ব।

জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনে অন্যতম বিষয় হয়ে উঠেছে মেডিকেল কলেজে থ্রেট কালচার। এ নিয়ে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক ও পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। অপহরণের ঘটনাকে অনেকে সেই থ্রেট কালচারের অঙ্গ হিসেবেই দেখছেন। হুমকি দিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা হলেও পুলিশ নীরব থাকে, এমনই অভিযোগ তোলা হয়েছে।

তবে এক্ষেত্রে পুলিশ অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে তদন্ত চালিয়েছে। গ্রেপ্তার করেছে শাসক দলের নেতাকে। চলতি চিকিৎসক আন্দোলনের প্রভাবেই কি পুলিশের এই সক্রিয়তা?

সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্যের বক্তব্য, চিকিৎসক আন্দোলনের জন্য নয়, বাংলাদেশের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই সতর্কতা। তিনি বলেন, "যে কোনো পরিস্থিতিতে যে কোনো দল যদি তার বিরুদ্ধে ক্ষোভকে সামাল দিতে চায়, তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হয়। বাংলাদেশের পর ভারতের সব রাজনৈতিক দল সতর্ক। তৃণমূল নেতৃত্বও সতর্ক, যেহেতু বারাসত থেকে যশোরের দূরত্ব বেশি নয়।"

সাবেক পুলিশকর্তা নজরুল ইসলাম ডিডাব্লিউকে বলেন, "দলের উচ্চ নেতৃত্ব থেকে নির্দেশ এসেছে, তাই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এখন ভোটে লড়তে গেলে অনেক টাকা লাগে। সেই টাকা জোগাড়ের জন্য অপরাধ করতে হয়। তাই বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি এই ধরনের কাজকর্মে যুক্ত হয়ে পড়েন।"