জার্মানিতে বেতন বৈষম্য – DW – 31.03.2010
  1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে বেতন বৈষম্য

৩১ মার্চ ২০১০

একই কাজের জন্য জার্মানিতে মহিলারা পুরুষদের চেয়ে কম বেতন পাচ্ছেন নানা জায়গায়৷ জার্মানিতে কিন্তু তা দেখা যাচ্ছে অনেক দিন ধরেই৷ সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ও ই সি ডি একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে৷

https://p.dw.com/p/Mipj
ছবি: dpa

জার্মানিতে একই কাজের জন্য পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের কম বেতন পাওয়ার দৃষ্টান্ত আছে নানা পেশায়৷ কখনও কখনও একজন পুরুষ সহকর্মী যা আয় করেন তাঁর ২৩ শতাংশ কম বেতন পান একজন নারী সহকর্মী৷ অথচ দুজন একই ধরণের কাজ করছেন, একই সময়ে কর্মস্থলে আসছেন, একই সময়ে কাজের শেষে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন৷ সব সুযোগ-সুবিধা, ছুটি-ছাটা একই রকম শুধু বেতনেই হেরফের৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা ও ই সি ডি-র রিপোর্টে জার্মানির স্থান এক্ষেত্রে শেষের দিকে৷

গত ১৩ বছরে নারী পুরুষের বেতনে ফারাক কমেছে মাত্র ১ শতাংশ৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নই শুধু নয় ও ই সি ডির সদস্যদেশগুলোর মধ্যে তুলনা করলেও জার্মানির অবস্থা বেশ হতাশাজনক৷ বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এ সমস্যাটি আরো তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে৷ প্রশ্ন, কেন এই বেতন বৈষম্য ? জার্মানির মত শিল্পোন্নত দেশে তা কি আদৌ সঙ্গত ?

blonde Frau im Büro, Laptop
ছবি: picture-alliance/chromorange

বেশিরভাগ জার্মান নাগরিকই মনে করেন নারী-পুরুষের মধ্যে এই বৈষম্য অনেক আগেই নির্মূল করে দেয়া উচিৎ ছিল৷ প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন ধরণের সমীক্ষায় জানিয়েছেন, আধুনিক এই জার্মান সমাজে বেতন বৈষম্য একেবারেই মানায় না৷ কিন্তু তারপরেও নারীরা পুরুষদের চেয়ে কম বেতন পাচ্ছেন৷ এবং তা শুরু হচ্ছে কর্মজীবনের প্রথম দিন থেকেই৷ বেশ জোর দিয়েই কথাগুলো বলা হয়েছে হান্স বোয়েকলার ফাউন্ডেশন-এর পক্ষ থেকে৷

মহিলারা কর্মজীবন শুরু করছে পুরুষদের চেয়ে কম বেতন দিয়ে৷ অথচ দেখা যাচ্ছে কাজ তাদের একই, দুজনের যোগ্যতাও একই মাপের - অথচ বেতন হবে ভিন্ন মাত্রার৷ যে প্রতিষ্ঠান যত বড়, সে প্রতিষ্ঠানে বেতন বৈষম্য তত তীব্র৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বেশ স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছে, ২০১০ সালের মধ্যে এই বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে জার্মানিকে৷ কারণ জার্মানি পিছিয়ে রয়েছে৷ জার্মান পরিবার মন্ত্রণালয়ের নারী পুরুষের সমানাধিকার সংক্রান্ত বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন এফা মারিয়া ভেল্সকপ ডেফা৷

এই বৈষম্য প্রসঙ্গে তিনি জানান,‘‘এই বেতন বৈষম্য, অভিযোগ আমরা অবশ্য খতিয়ে দেখবো৷ কিভাবে এই সমস্যার সামধান করা যায় তাও আমরা জানার চেষ্টা করবো৷ একটি বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি যে জার্মানিতে, যে কোন কর্মস্থলে দেখা যায় পুরুষদের চেয়ে নারীরা তুলনামূলকভাবে একটু পিছিয়ে রয়েছে৷ এর কারণ হল প্রসবকালীন ছুটি এবং শিশুর জন্মের পর মা চাইলে আরো বেশ কিছুদিন ছুটি ভোগ করতে পারেন৷ ফলে চাকরিতে বিরতি ঘটে তাদের ক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে বেশি৷ এই ছুটি চলাকালে তাঁর বেতন বাড়ে না ঠিকই কিন্তু ভবিষ্যতে তাঁর পদোন্নতির সম্ভাবনা কমে যায়৷ আমরা এ পর্যন্ত অনেক কিছু করেছি, বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনতেও সক্ষম হয়েছি৷ আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ট্রেড ইউনিয়ন থেকে শুরু করে মালিক সংগঠন, নারী সংগঠন সবার সঙ্গেই কথা বলার চেষ্টা করছি৷ অন্তত এতটুকু আমরা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে ২০২০ সালের মধ্যে ২৩ শতাংশের যে ফারাক রয়েছে তা কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে চাই৷''

অর্থাৎ আগামী দশ বছরের মধ্যে জার্মানিতে নারী-পুরুষের মধ্যে বেতন বৈষম্য ১০ শতাংশ কমাতে হবে৷ সেই পথও বেশ দীর্ঘ৷ উদাহরণস্বরূপ সুইজারল্যান্ডের কথা বলা যেতে পারে৷ সেখানেও জার্মানির মত অবস্থা৷ দেশের সংবিধানে বেশ পরিষ্কারভাবেই বলা হয়েছে কোথাও কোন ধরণের বৈষম্য থাকা চলবে না৷ কিন্তু শুধু কাগজেই এই নীতি সীমিত রয়েছে৷ সুইজারল্যান্ডে একজন পুরুষ হটডগ বিক্রেতা একজন মহিলা পনির বিক্রেতার চেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করে৷

৯০এর দশকে সুইজারল্যান্ডে আইন প্রণয়ন করা হয় এই মর্মে যে, যে-কোন কাজের জন্য বেতন একই হবে৷ তা বাস্তবায়নও করা হয়েছে৷ কিন্তু বৈষম্য রয়ে গেছে৷ বার্ণের শ্রম এবং সামাজিক বিজ্ঞান দপ্তরে কাজ করছেন সিলভিয়া স্ট্রুব৷ তিনি জানান, আইনের একটি ধারায় বেশ পরিষ্কারভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে - সংশ্লিষ্ট আইনটি খতিয়ে দেখা সম্ভব এবং তা যদি মান্য করা না হয় তাহলে নিষেধাজ্ঞা পর্যন্ত আরোপ করা যেতে পারে৷ ৯০ এর দশকের শেষে সমানাধিকার দপ্তর এবং কমিশন আমাদের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং আমাদের এক ধরণের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরির দায়িত্ব দেয়৷ ২০০৪ সাল থেকেই আমরা নজর রাখছি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর৷ কিন্তু সত্যিকার অর্থে ২০০৬ সালে এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু হয়েছে৷

Bildgalerie Westsahara 8
ছবি: DW/Meike Scholz

অথচ ভিন্ন একটি চিত্র চোখে পড়বে ক্যানাডার, কোবেক প্রদেশে৷ সেখানে একই বেতন চালু রাখার স্বার্থে আইন প্রণয়ন পর্যন্ত করা হয়েছে এবং তা মেনেও চলা হচ্ছে৷ এর জন্য অবশ্য বিভিন্ন নারী সংগঠন এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলো প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করেছিল৷ এরপরই শ্রম এবং কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আইনটি পাশ করতে বাধ্য হয়৷ আইনটি সরকারি এবং বেসরকারি - দু ধরণের প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য৷ এরিক চ্যারেস্ট কাজ করছেন কোবেক বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ আইন প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, এই আইন অনুযায়ী প্রতিটি কোম্পানিকে প্রমাণ করতে হবে যে তাদের কর্মস্থলে মহিলারা পুরুষদের সমান সমান বেতন পাচ্ছে৷ এবং যে সব কোম্পানিতে প্রধানত মহিলারা কাজ করেন তাদের কম বেতন দেয়া হচ্ছে না৷ সবসময়ই তুলনা করা হয় পুরুষদের বেতনের সঙ্গে৷ প্রতিটি কোম্পানিকে পরে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে হয়, প্রমাণ করতে হয় যে সেই কোম্পানি তাদের প্রতিটি কর্মীকে একই কাজের জন্য একই বেতন দিচ্ছে৷ যদি দেখা যায় যে একটি পদে কাজের চাপ অনেক বেশি কিন্তু বেতন কম কারণ সেখানে একজন মহিলা কর্মরত রয়েছেন তাহলে সেই পদের বেতন তাৎক্ষণিকভাবে পরিবর্তন করা হয় অর্থাৎ বাড়ানো হয়৷ কিন্তু তার মানে এই নয় যে সেক্ষেত্রে পুরুষদের পারিশ্রমিক কমানো হবে৷

জার্মানিতে নারী-পুরুষের মধ্যে বেতন নিয়ে বৈষম্য - এ বিষয় নিয়ে আরো বিস্তারিত জানতে আমরা কথা বলেছি বার্লিনে ও ই সি ডি-র মুখপাত্র মাথিয়াস রুম্ফ -এর সঙ্গে৷ তাঁর কছে প্রথম প্রশ্ন ছিল, বেতন নিয়ে এই বৈষম্য কি সরকারি এবং বেসরকারি দু ধরণের প্রতিষ্ঠানেই দেখা যাচ্ছে ? তিনি জানান, সাধারণভাবে দু জায়গাতেই আমরা তা লক্ষ্য করছি৷ যে কোন কাজের জন্য ঘন্টা হিসেবে যে পারিশ্রমিক দেয়া হয় সেখানে যে কোন মহিলা যে কোন পুরুষের তুলনায় অত্যন্ত কম আয় করে থাকেন৷ যেখানেই অর্থ সংক্রান্ত বিষয়গুলো জড়িত সেখানেই এই ফারাক চোখে পড়বে৷ এমন অনেক কর্মক্ষেত্র রয়েছে যেখানে কোন পুরুষ চোখে পড়বে না, শুধুই মহিলা৷ এমনকি সে সব জায়গায়ও বেতনের এই রকমফের চোখে পড়বে৷ যেমন বাচ্চা দেখাশোনা করার জন্য যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে৷ পারিশ্রমিকের এই তারতম্য লক্ষ্য করা যায় বড় বড় প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ পদগুলোতে৷

কেন এই তারতম্য, কেন এই বৈষম্য ? মাথিয়াস রুম্ফ জানান, যে কোন কর্মস্থানে গেলে দেখা যাবে পুরুষদের তুলনায় মহিলারা কাজ করছে বেশি৷ কিন্তু হাতে গোনা কয়েকটি জায়গাতেই মহিলারা কাজ করছে৷ যেমন সেক্রেটারির কাজে আমরা পুরুষদের তুলনায় মহিলাদেরই বেশি দেখি, ডে-কেয়ার বা চাইন্ড কেয়ার সেন্টারে মহিলারা বাচ্চা দেখাশোনা করছে কিন্তু সংস্থার প্রধান একজন পুরুষ৷ সে তুলনায় পুরুষদের মোটামুটি সব জায়গাতেই দেখা যাবে৷ যে কোন সংস্থার সর্বোচ্চ পদে একজন পুরুষ আবার নিরাপত্তারক্ষীও একজন পুরুষ৷ কোন কোন ক্ষেত্রে বেশ কিছু পদে শুধুমাত্র পুরুষরাই আবেদন করতে পারে৷ বেতনের তারমতম্য এসব ক্ষেত্রে চোখে পড়বে বেশি৷

Entführung im Irak - Krisenstab des Auswärtigen Amts
ছবি: picture-alliance/dpa

মাথিয়াস রুম্ফ জানান, জার্মানিতে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে দেখা যায় অপেক্ষাকৃত কম৷৷ একজন পুরুষ সারাজীবন একজন মহিলার চেয়ে বেশি কাজ করে থাকে৷ বেতন এক না হওয়ার এটিও একটি কারণ৷ তিনি আরো জানান, সারা জার্মানিতে কর্মক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যাবে৷ জার্মানিতে খন্ডকালীন কাজ খুব বেশি৷ এবং এ ধরণের চাকরিতে মহিলারাই এগিয়ে৷ অবাক হলেও সত্যি যে জার্মানিতে কর্মরত মহিলাদের ৫০ শতাংশই পার্ট টাইম চাকরিতে নিযুক্ত৷ স্বাভাবিকভাবেই ফুল টাইমের তুলনায় পার্ট টাইম চাকরিতে পয়সা কম৷ এই কাজগুলোতে বেতন দেয়া হয় ঘন্টা ধরে৷

চাকুরিজীবি কোন মহিলার জন্য বাচ্চা, সংসার এবং চাকরি এই তিন দিক সামলাতে গেলে কোন না কোন একটিতে টান পড়ে৷ এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় চাকরিটাই কোন রকমে টিকে রয়েছে, বাকি দুটো বেশ ভালোভাবেই সামলানো গেছে৷ মাথিয়াস বললেন, যখন কোন দম্পতি বাচ্চা নেয়ার কথা ভাবে তখনই দেখা যায় হবু মাকেই চাকরি থেকে কিছুদিনের জন্য সরে দাঁড়াতে হচ্ছে৷ এবং ঠিক এ জায়গাতেই পুরুষরা এগিয়ে যায় অনেক সামনে৷ গর্ভবতী মা তখন বাড়িতে থাকেন, বাচ্চা হওয়ার পরও তিনি হয়ত ফুল টাইম চাকরি করেন না - পার্ট টাইম চাকরি খোঁজেন বা করেন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশের চেয়ে জার্মানিতে তা চোখে পড়বে বেশি৷ বেতন সমান না হওয়ার এটিও অন্যতম একটি কারণ ৷

প্রতিবেদক: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদক: আবদুল্লাহ আল-ফারূক