চকচকে ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে সেপসিস শনাক্তকরণ – DW – 20.12.2011
  1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চকচকে ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে সেপসিস শনাক্তকরণ

২০ ডিসেম্বর ২০১১

যে সব রোগে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়, তার মধ্যে সেপসিস বা রক্তদুষ্টি অন্যতম৷ ব্যাকটেরিয়ার ছোট্ট সংক্রমণ থেকে শুরু হয়ে অতি দ্রুত রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এই দূষণ৷

https://p.dw.com/p/13VtE
ব্যাকটেরিয়াছবি: picture-alliance/dpa

সেপসিসে আক্রান্ত হওয়ার ধরনটি প্রায় সব ক্ষেত্রেই এক রকম৷ ব্যাকটেরিয়াগুলি শরীরের ছোট এক জায়গা সংক্রমিত করে, যেমন অপারেশন করা কোনো হাড়, ফুসফুস বা হার্টের ভাল্ভ৷ তারপর সারা শরীরেই ছড়িয়ে পড়ে৷ ধ্বংস করে হাড়গোড় ও দেহকোষ৷ শেষ পর্যন্ত জীবনবিপন্নকারী হয়ে উঠতে পারে এই দূষণ৷ অথচ অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে সহজেই দমন করা যায় সেপসিস৷ এই প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটলান্টার জর্জিয়া টেকনোলজি অব ইন্সটিটিউটের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর নীরেন মূর্তি বলেন, ‘‘কোনো রোগী হয়তো খুব বেশি জ্বর নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসেন৷ কিন্তু ডাক্তারের পক্ষে তাঁর জ্বরের আসল কারণটি শনাক্ত করা বেশ শক্ত৷ ব্যাকটেরিয়ার কারণে জ্বর হয়ে থাকলে, সেটা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত চিকিত্সক রোগীকে কোনো অ্যান্টিবায়োটিকও দেননা৷''

ছড়িয়ে পড়ার আগেই শনাক্তকরণ

গবেষক মূর্তি ও তাঁর টিম চিকিত্সার সুবিধার জন্য ব্যাকটেরিয়াগুলিকে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ার আগেই চিহ্নিত করতে চান৷ তাঁরা এক ধরনের কনট্রাস্ট দ্রব্য বের করেছেন, যার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়াগুলি ঝকমকে হয়ে দেখা যায়৷ ইঁদুরের ক্ষেত্রে পরীক্ষা নিরীক্ষায় এই পদ্ধতির সাফল্য দেখা গেছে৷ নীরেন মূর্তির ভাষায়, ‘‘আমাদের আশা, রোগী একটু অসুস্থ বোধ করলেই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব৷ প্রথম অবস্থায় ব্যাকটেরিয়াকে অ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা দমন করাও সহজ৷ এছাড়া ব্যাকটেরিয়ারা শরীরের কোথায় আস্তানা গেড়েছে, তা বুঝতে পারলে ডাক্তাররা অপারেশন করে জায়গাটি সহজে কেটে ফেলতে পারেন৷''

কনট্রাস্ট দ্রব্যটি মালটোডেক্সট্রিন থেকে তৈরি৷ খেলোয়াড়দের খাদ্যতালিকায় এটা সম্পূরক হিসাবে পরিচিত৷ বলা যায় বিশেষ আকারে গ্লুকোজের এক প্যাকেজ৷ ব্যাকটেরিয়াদের প্রিয় খাবার৷ গবেষকরা মালটোডেক্সট্রিনকে এক ধরনের চকমকে রঙের সঙ্গে মেশান৷ ব্যকটেরিয়ারা রঙসহ তা খেয়ে ফেলে৷ এ ক্ষেত্রে বিশেষত্ব হল এই যে, শুধু ব্যাকটেরিয়ারাই দ্রব্যটি গলাধঃকরণ করতে পারে শরীরের কোষে তা ঢোকেনা৷ মূর্তির মতে, কনট্রাস্ট দ্রব্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে৷ তিনি জানান, প্রথমে ‘‘আমরা ইঁদুরের উরুতে ই-কোলি ব্যাকটেরিয়া ঢুকিয়ে সংক্রমিত করেছি৷ তারপর কনট্রাস্ট দ্রব্য ইনজেকশন করে গবেষণাগারে পরীক্ষা করে লক্ষ্য করেছি যে, ব্যাকটেরিয়াগুলিকে ভালভাবেই দেখা যাচ্ছে৷''

Flash-Galerie Bakterien
ছবি: public domain

ছবিতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে সংক্রমণ

গবেষণাগারের ছবিতে লক্ষ্য করা যায়, পরীক্ষার জন্য অচেতন করা ইঁদুরের বাঁ পায়ে উজ্জ্বল লাল দাগ৷ মূর্তি বলেন, ‘‘এটা পরিষ্কার বোঝা যায়, লাল দাগটায় ব্যাকটেরিয়ারা বসে আছে৷ অন্য জায়গাগুলি অন্ধকার৷''

মানুষের ক্ষেত্রেও এই ভাবে ব্যাকটেরিয়ার ক্ষুদ্র সংক্রমণ নির্ণয় করা সম্ভব, এক ধরনের টোমোগ্রাফির মাধ্যমে৷ এতে একটি স্ক্যানার সারা শরীরের ত্রিমাত্রিক ছবি তুলে দেহের বিভিন্ন স্তরকে দর্শনীয় করে তুলতে পারে৷ এজন্য কনট্রাস্ট দ্রব্যকে একটু পরিবর্তন করা প্রয়োজন৷ উজ্বল রঙের জন্য এখন যে পদার্থ ব্যবহৃত হয়, তার বদলে অন্য আরেক পদার্থ প্রয়োগ করা হবে, যাতে স্ক্যানার তা চিহ্নিত করতে পারে৷ নীরেন মূর্তি জানান, ‘‘আমাদের এজন্য পশু ও মানুষের ওপর আরো পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে৷ আমি আশা করি এই কনট্রাস্ট পদার্থটি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাজারে আসবে৷''

মূর্তি ও তাঁর সহকর্মীরা সুদূর প্রসারী পরিকল্পনাও করছেন৷ মালটোডেক্সট্রিন শুধু ব্যাকটেরিয়ার ভেতরেই প্রবেশ করিয়ে ক্ষান্ত দিতে চাননা তাঁরা৷ অ্যান্টিবায়োটিকও ঢুকিয়ে দিতে চান ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে, যাতে সহজেই দমন করা যায় এগুলিকে৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান