এবার সিগারেট ছাড়বে কলকাতা? – DW – 14.07.2014
  1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এবার সিগারেট ছাড়বে কলকাতা?

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা১৪ জুলাই ২০১৪

ভারতের বিজেপি সরকারের প্রথম বাজেটে অস্বাভাবিক হারে কর-বৃদ্ধি হয়েছে সিগারেট ও অন্যান্য তামাকজাত পণ্যের ওপর৷ কিন্তু তার ফলে কি নিরস্ত হবে কলকাতা শহর?

https://p.dw.com/p/1Cbib
ছবি: Getty Images

ভারতের সবথেকে বেশি ধূমপায়ী কোন শহরে? সাম্প্রতিক অনুসন্ধান রিপোর্ট বলছে, পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রধান শহর কলকাতা হচ্ছে ধূমপায়ীদের স্বর্গ৷ সারা দেশের মধ্যে কলকাতা শহরেই সবথেকে বেশি পুরুষ এবং মহিলা ধূমপানে আসক্ত৷ সর্বশেষ যে জনমত সমীক্ষা হয়েছিল এ নিয়ে, তাতে দেখা যাচ্ছে, কলকাতার মতদাতাদের মধ্যে ৪৯ শতাংশই নিয়মিত ধূমপান করেন, যেখানে সারা দেশে ধূমপায়ীদের গড় হার হলো সমীক্ষায় মতদাতাদের ৪৩ শতাংশ৷ এই সমীক্ষায় তাঁদেরকেই ধূমপায়ী ধরা হয়েছিল, যাঁরা দিনে ১০টি বা তার বেশি সিগারেট খান৷ অর্থাৎ “ক্যাজুয়াল স্মোকার” যাঁরা, তাঁদের সমীক্ষার হিসেবে ধরা হয়নি৷ যার অর্থ, কলকাতা শহরে ধূমপায়ীদের প্রকৃত সংখ্যাটা নিশ্চিতভাবে আরও বেশি৷

Warnhinweis auf Zigarettenschachtel Australien
প্যাকেটের গায়ে ক্যানসারে ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুস বা মুখের ঘা-এর ছবি দেয়া হলেও কলকাতার ধূমপায়ীদের নিরস্ত করা যায়নিছবি: W.West/AFP/GettyImages

আরও কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে ওই সমীক্ষা থেকে, যেগুলো বেশ অস্বস্তিকর৷ যেমন এই শহরের যে ধূমপায়ীদের মধ্যে সমীক্ষা হয়েছিল, তাঁদের ৯৩ শতাংশই বলেছেন যে তাঁরা খুব ভালভাবেই জানেন, সিগারেট খেলে ক্যানসার হতে পারে! এ ব্যাপারে লোককে সচেতন করতে সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে ক্যানসারে ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুস বা মুখের ঘা-এর ছবি দেওয়া হলেও, কলকাতা শহরের ধূমপায়ীদের যে নিরস্ত করা যায় না, তার প্রমাণ, ৯৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁরা ধূমপান ছাড়ার কোনও চেষ্টাই কখনও করেননি৷ ৫০ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা মনে করেন ধূমপান ছাড়া তাঁদের পক্ষে থাকা অসম্ভব৷

এই পরিস্থিতিতে সিগারেটের দাম প্রায় দ্বিগুণ হতে চলেছে৷ এতে অবশ্য ধূমপায়ীরা যত না উদ্বিগ্ন, তার থেকে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন খুচরো সিগারেট বিক্রেতা ও স্টকিস্টরা, যেহেতু একমাত্র তাঁরাই কিছুটা আঁচ করতে পারছেন কী হতে চলেছে৷ দক্ষিণ কলকাতার এক ছোট সিগারেটের দোকানদার হেমন্ত জানা বিমর্ষ মুখে বললেন, তাঁর মনে হচ্ছে ব্যবসা তুলেই দিতে হবে, কারণ এখন যে সিগারেটের প্যাকেটের দাম ১০ টাকা, সেটা নাকি বেড়ে ৬০-৭০ টাকা হতে পারে বলে তাঁরা শুনেছেন৷ দামটা বেশি বাড়বে ছোট মাপের সিগারেটেরই, যেটা আমজনতা কিনে থাকে৷ আর আকারে বড় কিং সাইজ সিগারেটের দাম বাড়তে চলেছে প্রায় দ্বিগুণ, বললেন পার্ক সার্কাস অঞ্চলের সিগারেট স্টকিস্ট মহম্মদ আসলাম৷ জানালেন, জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষার কারণে সিগারেটের দাম বাড়িয়েছে সরকার, এতে আপত্তির কিছু নেই৷ কিন্তু এমন অস্বাভাবিক হারে দাম বাড়ালে বহু মানুষের রুটি-রুজিতে টান পড়বে৷

আর ধূমপায়ীরা কী ভাবছেন? অনেকেই ভাবছেন ধূমপান ছেড়ে দেবেন, কারণ বাজেট সুপারিশ কার্যকর হলে, বর্ধিত কর যুক্ত হয়ে এক প্যাকেট সিগারেটের যা দাম হবে, তা টাকা পুড়িয়ে নষ্ট করারই সামিল৷ পেশায় আইনজীবী সন্দীপ ভট্টাচার্য একটা সময় দিনে চার-পাঁচ প্যাকেট সিগারেট খেতেন৷ মানে ৮০ থেকে ১০০টা সিগারেট! শারীরিক কারণে এবং ডাক্তারের নিষেধে আর পরিবারের তাড়নায় তিনি এখন আর ধূমপান করেন না৷ সন্দীপ বলছেন, “আগেই সিগারেট ছেড়ে ভাল হয়েছে৷ আমার ব্র্যান্ডের সিগারেটের এক প্যাকেটের দাম এবার অন্ততপক্ষে আড়াইশো টাকা হবে, যেটা আমার সামর্থ্যের বাইরে৷ আমি সিগারেট খাওয়ার মতো বড়লোক নই”, হাসতে হাসতে বললেন সন্দীপ৷

সমীক্ষায় জানা গিয়েছিল, কলকাতা শহরে একজন ধূমপায়ী দিনে গড়ে ৩৫০ টাকা খরচ করেন সিগারেটের পিছনে৷ সেই খরচটা এবার আরও বাড়বে৷ সরকারি চাকরি করেন দীপ্তেন্দু সরকার৷ তিনি ঠিক করে ফেলেছেন এবার সিগারেট ছাড়বেন৷ “ছাড়তেই হবে, উপায় নেই৷ একটা বাজে নেশার পিছনে এত খরচ করতে গায়ে লাগবে৷” বললেন দীপ্তেন্দু৷ যদিও প্রায় কুড়ি বছরের বদভ্যেস কীভাবে ছাড়বেন, সেই নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন৷ দীপ্তেন্দুর মতো ভাবনা আরও অনেকেরই৷ ছাড়তেই হবে, কিন্তু কীভাবে, তা জানা নেই৷

“এসব আসলে দূর্বলের অজুহাত! ” বললেন ডঃ নির্মল হালদার৷ তিনি নিজে ধূমপান করেন না, যাঁরা অভ্যাসের দাস, তাঁদের তিনি পছন্দ করেন না৷ কিন্তু তাঁর আপত্তিটা ঠিক ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের জায়গা থেকে নয়৷ ডঃ হালদারের বক্তব্য, ক্যান্সার ইত্যাদি রোগ তো অনেক পরের ব্যাপার, হাই ব্লাড প্রেশার থেকে ডায়াবিটিস, মাইগ্রেন, এরকম অনেক নিত্যনৈমিত্তিক রোগকে জিইয়ে রাখে ধূমপানের বদভ্যাস৷ কিন্তু লোকে যদি স্বাস্থ্যের কারণে ধূমপান না ছাড়তে পারে, অন্তত সামর্থের অভাবে ছাড়ুক! সোজা কথা এই চিকিৎসকের৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য