ক্ষতিকর উল্কি – DW – 17.03.2012
  1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্ষতিকর উল্কি

১৭ মার্চ ২০১২

শরীরে ট্যাটু বা উল্কি আঁকা আজ কাল তেমন কোনো বিরল ব্যাপার নয়৷ জার্মানিতে ১০ থেকে ২০ শতাংশ মানুষ শরীরে সূচ ফুটিয়ে নানা রঙের উল্কি আঁকান৷ এই সব রঙে প্রায়ই বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ থাকে৷

https://p.dw.com/p/14M15
ছবি: picture alliance/Bildagentur-online

অমোচনীয় কালি দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে শরীরে রঙ বেরঙের চিত্র আঁকাকে উল্কি বলা হয়৷ বহু পুরানো এই পদ্ধতিটি অনেক জাতির মধ্যেই কমবেশি প্রচলিত৷ এক কালে কয়েদি ও ক্রীতদাসদের শরীরে উল্কি দিয়ে এঁকে দেয়া হত নানা রকমের নকশা৷ যা সহজে ঢেকে রাখা বা মুছে ফেলা যেত না, সারা জীবন বহন করতে হত৷ কিন্তু এখন যে কেউ আগ্রহী হচ্ছেন শরীরের উল্কি আঁকাতে৷ স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান না তারা৷ যদিও উল্কির রঙে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থাকে৷

Tattoo Totenkopf
কঙ্কালের ট্যাটুছবি: fotolia/Haramis Kalfar

নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ

সম্প্রতি জার্মানির বাডেন ভ্যুর্টেনব্যার্গ রাজ্যের উদ্যোগে উল্কি আঁকার ব্যাপারে জার্মানি ও ইউরোপীয় আইন কানুন কঠোর করার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ এই রাজ্যের ভোক্তা সুরক্ষা মন্ত্রনালয়ের বির্গিট বিন্সলের মতে, উল্কির চেয়ে প্রসাধনীর সামগ্রী নিয়ন্ত্রণের আইন কানুন বরং কঠোর৷ অথচ মেক-আপ চামড়ার ওপর সাময়িকভাবে থাকে, কিন্তু উল্কি থাকে সারা জীবন৷

জার্মানিতে ২০০৯ সাল থেকে ট্যাটু সংক্রান্ত একটি জাতীয় বিধিবিধান চালু হয়৷ ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে ইউরোপব্যাপী নতুন সুপারিশের কথা শোনা যাচ্ছে৷ তবে বির্গিট বিন্সের কাছে তা যথেষ্ট নয়৷ তাঁর মতে, এই সুপারিশ ইউরোপের অল্প কয়েকটি দেশেই শুধু কার্যকর হবে৷

সম্প্রতি জার্মান সংসদের উচ্চকক্ষ বুন্ডেসরাট'এ বিষয়টির ওপর একটা দিক নির্দেশনা দেয়া হল৷ এতে বলা হয়েছে, উত্পাদনকারীদের প্রমাণ করতে হবে যে, ট্যাটুতে ব্যবহার করা পদার্থ স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়৷ এছাড়া এমন সব পদার্থের একটা তালিকা তৈরি করতে হবে, যেগুলি ক্ষতিকারক নয়৷

Trauer um Michael Jackson
মাইকেল জ্যাকসনের ট্যাটু হয়ে উঠেছিল জনপ্রিয়ছবি: picture alliance/dpa

অধিকাংশ উপাদানই বিপজ্জনক

সেই ২০১০ সালেই ফ্রাইবুর্গ ও কার্ল্সরুয়ের স্বাস্থ্যবিষয়ক তদারকি দপ্তরগুলি উল্কির রঙে ক্ষতিকর পদার্থের ব্যাপারে সতর্ক করেছিল৷ ট্যাটুতে ব্যবহৃত ৩৮ উপাদানের মধ্যে এক তৃতীয়াংশেরই অনুমোদন নেই৷ অর্ধেক স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে অ্যারোমাটিক অ্যামিন, নাইট্রোসেমাইন ও ফেনোল নামের রাসায়নিক পদার্থ৷ এই গুলিকে ক্যানসার উদ্দীপক বলেও মনে করা হয়৷ বির্গিট বিন্সলে জানান, ‘‘কিছু কিছু পদার্থ থেকে তৈরি রঙ এমন সব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, যার নাম থেকেই বোঝা যায় এটি কী৷ যেমন ‘ফেরারি রোট'৷ গাড়ি রঙ করার জন্য ব্যবহার করা হয় এই রঙ৷ যার সন্ধান পাওয়া যায় ট্যাটুর রঙের মধ্যেও৷''

পরীক্ষা নিরীক্ষায় দেখা গেছে, এই রঙের উপাদান মানবদেহের লসিকা গ্রন্থির মধ্যে জমা হতে পারে৷ বিন্সলে বলেন, ‘‘লসিকা গ্রন্থির প্রক্রিয়াটি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ বিশেষ করে শরীরের বিশুদ্ধিকরণের ক্ষেত্রে৷ এই রাসায়নিক পদার্থ শরীরে থাকাটা বেশ বিপজ্জনক৷''

উল্কি দূর করতেও ঝুঁকি

অনেকে উল্কি আবার দূর করাতেও চান৷ এজন্য নিতে হয় লেসার রশ্মির সাহায্য৷ এক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ ত্বকে আঁকা রঙের উপাদান ধ্বংস হওয়ার পর শরীরে কী প্রতিক্রিয়া ঘটে, তা কেউ জানেনা৷ তবে বিন্সলের মতে, ট্যাটুর রঙের ফলে ক্যান্সার সৃষ্টি হয়েছে বলে প্রমাণ এখনও মেলেনি৷

Model auf Motorrad BdT
ট্যাটু ওয়েস্টার্ন স্টাইলছবি: picture alliance/dpa

বিশেষজ্ঞরা এখন চিন্তা ভাবনা করছেন, সংশ্লিষ্টদের কীভাবে এ বিষয়ে সচেতন করা যায়৷ উল্কি নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামানো হয়নি এতদিন৷ বড় কোনো কোম্পানি থেকে নয় বরং ছোট ছোট সরবরাহকারীদের কাছ থেকে কেনা হয় উল্কির সামগ্রী৷ নিয়ন্ত্রণের বাধ্যবাধকতাও তাদের নেই৷ ইদানীং বিশেষ করে চীন থেকেই আসছে উল্কি আঁকার সরঞ্জাম৷

শুধু উল্কির ভক্তরাই নয়, উল্কি প্রস্তুতকারী ও ব্যবসায়ীরাও এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নীতিমালা চান৷ নর্থ রাইন ওয়েস্ট ফালিয়া রাজ্যের বড় এক উল্কি স্টুডিওতে কাজ করেন অ্যান্ডি৷ আপাদমস্তক উল্কি আঁকা এই ব্যক্তি মনে করেন, এই ধরনের আলোচনা সমালোচনার ফলে উল্কি ব্যবসায়ী ও স্টুডিওর নাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে৷ অ্যান্ডির ভাষায়, ‘‘লোকের মুখে মুখে চলা নেতিবাচক প্রচারণার চেয়ে, মন্দ কিছু আর নেই৷ খদ্দেরদের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিলে, তা দ্রুত ছড়িয়ে যায়৷''

উল্কির রঙ প্রস্তুতকারীরা রাজনৈতিক দিক নির্দেশনাকে কতটা মেনে চলবেন, সে ব্যাপারে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা৷ সুঁই ফুটিয়ে যে রঙ ঢোকানো হয় শরীরে, তা স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর, সে ব্যাপারে ব্যাপক পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো প্রয়োজন৷ কিন্তু এই পথটা যেমন দীর্ঘ তেমন ব্যয়বহুল৷ প্রসাধনী শিল্পের মত অতটা আর্থিক সংগতি ট্যাটু শিল্পের নেই৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য