ইসরায়েল-হামাস: ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ কি বৈধ? – DW – 02.08.2024
  1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
রাজনীতিইসরায়েল

ইসরায়েল-হামাস: ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ কি বৈধ?

২ আগস্ট ২০২৪

ইসরায়েল যাদেরকে দুশমন মনে করে তাদেরকে ‘টার্গেটেড কিলিং’ বা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার ইতিহাস রয়েছে৷ চলতি সপ্তাহে হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়াও সম্ভবত এমন হত্যাকাণ্ডের শিকার৷

https://p.dw.com/p/4j2h3
মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রায়ই যুক্তি দেয় যে, সব টার্গেটেড কিলিংই অবৈধ এবং এগুলো ক্রমশ স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিনত হচ্ছে৷ অন্যদিকে, সরকারগুলো এই চর্চাকে এক কার্যকর উপায় হিসেবে বিবেচনা করে৷
২০০০ সাল থেকেই ‘‘টার্গেটেড কিলিং’’ নিয়ে রাখঢাক বাদ দিয়েছে ইসরায়েলছবি: Abdel Kareem Hana/AP Photo/picture alliance

হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়া, যিনি গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্ত করার ক্ষেত্রে মুখ্য মধ্যস্থতাকারীদের একজন ছিলেন, বুধবার তেহরানে দূরনিয়ন্ত্রিত বোমার বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন৷

তার মৃত্যুকে ‘টার্গেটেড কিলিং' বলা যেতে পারে, রেডক্রসের বিবেচনায় যার অর্থ হচ্ছে ‘‘একটি রাষ্ট্র বা সশস্ত্র গোষ্ঠী তাদের হেফাজতে নেই এমন কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির উপর ইচ্ছাকৃতভাবে এবং পূর্বপরিকল্পনার ভিত্তিতে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করে৷''

যদিও এটা সত্যি যে এখনো কোনা কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার দায় স্বীকার করেনি, তা সত্ত্বেও ধারণা করা হচ্ছে খুব সম্ভবত ইসরায়েল সরকার এই হামলার পেছনে রয়েছে৷ ইসরায়েল বর্তমানে গাজায় সামরিক অভিযানে সম্পৃক্ত রয়েছে৷ সেখানে তারা জঙ্গি গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে৷ দেশটির এরকম পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং প্রায়ই তারা সেগুলোর দায়ও স্বীকার করে না৷ 

গাজায় নিহতের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যরা হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন মনে করে৷

২০০৮ সালে আইনের অধ্যাপক নিলস মেলৎসারের লেখা ‘টার্গেটেড কিলিং ইন ইন্টারন্যাশনাল ল' অ্যাকাডেমিক বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে ইসরায়েল সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেটি ২০০০ সালে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের নীতিকে স্বীকৃতি দিয়েছিল৷

সেই সময় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী সন্ত্রাসীদের উপর ইসরায়েলি হেলিকপ্টার, গানশিপ এবং ‘বুবি ট্র্যাপ' ব্যবহার করা হতো৷ ২০০৭ সাল নাগাদ এরকম ২১০ জন ‘টার্গেটকে' হত্যা করা হয়৷ সেসব ঘটনায় আরো ১২৯ জন দর্শক প্রাণ হারান বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠন বাৎসিলিম৷

তবে ইসরায়েলই একমাত্র রাষ্ট্র নয় যেটি এ ধরনের কাজ করছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যসহ আরো অনেক রাষ্ট্রও ‘টার্গেটেড কিলিং' ঘটিয়েছে৷ আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার হার বাড়ছে৷

‘টার্গেটেড কিলিং' নিয়ে প্রায়ই বিতর্ক হয়, কারণ, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড, বিশেষ করে যেগুলো অন্য কোনো দেশের ভূখণ্ডে সংঘটিত হয়, সেসব দেশের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত হিসেবে বিবেচিত হয়৷ কিন্তু এ ধরনের ঘটনা আইনবিরোধী কিনা তা নিয়ে অস্বচ্ছতা রয়ে গেছে৷

আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একটি ‘টার্গেটেড কিলিং' বৈধ, নাকি অবৈধ তা অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কোন আইনি কাঠামোর মধ্যে হত্যাকাণ্ডটির মূল্যায়ন করা হচ্ছে৷ একটি দেশের নিজস্ব আইন, যুদ্ধ পরিস্থিতির কোনো সুনির্দিষ্ট আইন, এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এ সবের মধ্যে রয়েছে৷

মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রায়ই যুক্তি দেয় যে, সব টার্গেটেড কিলিংই অবৈধ এবং এগুলো ক্রমশ স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিনত হচ্ছে৷ অন্যদিকে, সরকারগুলো এই চর্চাকে এক কার্যকর উপায় হিসেবে বিবেচনা করে৷

প্রতিবেদন: ক্যাথরিন শ্যার/এআই