ইমরানকে কীভাবে সামলাবে যুক্তরাষ্ট্র! – DW – 22.06.2018
  1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইমরানকে কীভাবে সামলাবে যুক্তরাষ্ট্র!

২২ জুন ২০১৮

পাকিস্তানের ২৫ জুলাইয়ের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা আছে ইমরান খানের৷ কিন্তু আফগানিস্তানে মার্কিন ভূমিকার বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান, ট্রাম্পকে ফেলতে পারে জটিলতায়৷

https://p.dw.com/p/303ke
ছবি: Reuters/M. Raza

যুক্তরাষ্ট্রে ইমরান খানের বড় পরিচিত একজন সমাজকর্মী হিসেবে৷ নিজের দেশে তিনি একটি বিশ্বমানের হাসপাতাল পরিচালনা করেন৷ একজন ক্যারিশম্যাটিক চেহারার অসাধারণ সাবেক খেলোয়াড় হিসেবেও পশ্চিমা নারীদের মধ্যে তিনি বেশ জনপ্রিয়৷ কিন্তু এখনো ইমরান একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে ওয়াশিংটনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি৷

মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে ডয়চে ভেলে জানতে চেয়েছিল, ইমরান প্রধানমন্ত্রী হলে তারা তাঁর সঙ্গে কাজ করতে চান কিনা৷ সরাসরি উত্তর না দিলেও, কূটনৈতিক জবাবেই মিলেছে আভাস৷

‘‘মার্কিন সরকার পাকিস্তানে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের পক্ষে৷ সে দেশের নাগরিকেরা যাঁকে নির্বাচিত করবেন, আঞ্চলিক শান্তি ও উন্নতির লক্ষ্যে একই ধরনের এজেন্ডা নিয়ে তাঁর সাথেই কাজ করতে আমরা প্রস্তুত,’’ বলছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র৷

এই বক্তব্যই তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই দলের প্রধান ইমরান খান সম্পর্কে মার্কিন সরকারের মনোভাব স্পষ্ট করে৷

ভুট্টো বা নওয়াজ শরিফের সাথে কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে কাজ করতে হয়, তা জানা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের৷ কিন্তু ইমরান খানের ক্ষেত্রে তা নয়৷ তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফগানিস্তান ও ভারতে জঙ্গি কার্যক্রম ঠেকাতে ইমরানকে ওয়াশিংটনের সঙ্গেই কাজ করতে হবে৷

ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় মার্কিন কূটনীতিক ও রাজনীতি বিশ্লেষকরা প্রায়ই ইমরান খানের একটি কথা মনে করিয়ে দেন৷ ইমরান একবার বলেছিলেন, তিনি নির্বাচিত হলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা করতে আসা প্রতিটি মার্কিন ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করবেন৷

তাঁর এমন কথায় পাকিস্তানের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর মধ্যেও ভয় ঢুকেছিল৷ জেনারেলরা ভাবছিলেন, ইমরান নির্বাচিত হলে ওয়াশিংটনের সঙ্গে টানাপড়েন আরো জটিল পরিস্থিতিতে গড়াবে৷

সময় গড়াতে ইমরানও নিজের বক্তব্যে রাশ টেনেছেন৷ পরবর্তীতে পস্তাতে হবে না, এমন কথা বলার চেষ্টা করলেও মাঝেমধ্যেই মুখ ফসকে বেফাঁস কথাও বলে ফেলেছেন৷

উড্রো উইলসন সেন্টার ফর স্কলারসের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলমান বলছেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইমরানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চিন্তাটা খুব একটা সুখের নয়৷ কারণ, তিনি এবং তাঁর দল বরাবরই অ্যান্টি-অ্যামেরিকার ভূমিকা নিয়ে এসেছেন, যা সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ঠিক উলটো৷’’

কুগেলমান মনে করেন, ‘‘একই সাথে পাকিস্তানের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর বিশাল একটি ভূমিকা থাকে৷ ফলে, যদি সম্ভাব্য পিটিআইর সরকারও সুর নরম করতে বাধ্য হয়, তাতেও আমি আশ্চর্য হবো না৷’’

এই মাসের শুরুর দিকে আফিগানিস্তানে সাময়িক যুদ্ধবিরতির জন্য পাকিস্তানের সমর্থন প্রয়োজন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের৷ কিন্তু সে সময় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী বা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ না করে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সরাসরি দেশটির সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়াকে ফোন দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও৷

জেনারেল বাজওয়া শুধু মার্কিন অনুরোধই রাখেননি, কাবুলে গিয়ে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী শান্তিপ্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনাও করে এসেছেন৷

যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হোসেইন হাক্কানি বলছেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্র অন্য পাকিস্তানি নেতাদের যেভাবে সামলেছে, ইমরান খানও তার ব্যতিক্রম হবেন না৷’’

‘‘জুলফিকার আলী ভুট্টোও নির্বাচনের আগে মার্কিনবিরোধী ভূমিকা নিয়েছিলেন৷ কিন্তু তিনিও নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নেয়ার আগে রিচার্ড নিক্সনের সাথে দেখা করে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে গিয়েছেন৷’’

তবে পাকিস্তানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে বলে মনে করেন হাক্কানি৷

ফলে নির্বাচিত হলেও রাজনীতির পিচে ইমরান খানের ইনিংস কত দীর্ঘ হয়, তা অনেকাংশেই নির্ভর করছে দেশের ভেতরে-বাইরের অন্য ‘খেলোয়াড়দের’ সমর্থনের ওপর৷

আনোয়ার ইকবাল/এডিকে