বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে আ. লীগ? – DW – 20.06.2017
  1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে আ. লীগ?

২০ জুন ২০১৭

হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আপাত সুসম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে অনেকদিন ধরে৷ অনেকেই মনে করেন, এটি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশল৷ কিন্তু এর কারণে কি সমাজের উল্লেখযোগ্য একটি অংশের আস্থা হারাচ্ছে দলটি?

https://p.dw.com/p/2f0eK
Bangladesch  Sheikh Hasina trifft Shah Ahmad Shafi
ছবি: bdnews24.com

বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, এ কৌশল অবলম্বন করে আওয়ামী লীগ ভোট বাড়াতে পারবে মনে করলেও আসলে তা বাড়বে না৷ ভোটের অঙ্ক আপাত দৃষ্টিতে খুব সরল মনে হলেও একে এত সহজ করে দেখতে চান না ব্লগার আরিফ জেবতিক৷ তিনি মনে করেন, ‘‘বিএনপি ও তার জোটের অন্যান্য দলগুলো এখন আর মাঠ গরম করতে পারছে না৷ পাবলিক নুইসেন্স তৈরি করার শক্তি এখন একমাত্র হেফাজতে ইসলামেরই আছে৷ তাই সেটি দমন করার জন্যই আওয়ামী লীগের এ কৌশল৷ ভোটের রাজনীতির জন্য তারা প্রয়োজনীয় নয়৷''

আরিফ জেবতিক

তবে অনেকে মনে করেন, হেফাজতের সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক' তৈরি করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ তার অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শ থেকে সরে আসছে৷ তাঁরা বলছেন, বিএনপিকে এতদিন ‘সাম্প্রদায়িক দল' হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের বিরুদ্ধে ‘ধর্ম নিয়ে রাজনীতি' করার অভিযোগ তুলতেন আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা৷ কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া সেই দলই এখন ধর্মীয় রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আপোশের নীতিতে চলছে৷ অবশ্য সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রাজনৈতিক দলকে বাস্তবতার নিরিখে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়৷ কোনো কোনো নেতা আবার ‘আপোশের' কথা সরাসরি অস্বীকার করেছেন৷ কওমী মাদ্রাসার অসংখ্য ছাত্র-শিক্ষক জনগণের বাইরে নয়– এই যুক্তিতে কেউ কেউ বলছেন, এটি ‘ইনক্লুসিভ’ বা অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি৷

সেক্ষেত্রে স্থানীয় রাজনীতিতে জামায়াতের কর্মীদের আওয়ামী লীগে যোগদানের যেসব খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলোও এই অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির অংশ কিনা এই প্রশ্ন উঠেছে৷

সৈয়দ আবুল মকসুদ

আরিফ জেবতিক মনে করেন, আওয়ামী লীগ কখনোই ধর্মের রাজনীতি থেকে দূরে ছিল না৷ প্রয়োজনে দলটি সবসময়ই আপোশ করেছে৷ ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগেও করেছে৷ তাই কখনোই তারা সাধারণভাবে প্রগতিশীল ধ্যানধারণার মানুষদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি বলেও আরিফ জেবতিক মনে করেন৷ তাঁর মতে, কেউ যদি সেই আস্থা রেখে থাকেন তাহলে সেটি তার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত৷

কলামিস্ট ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ অবশ্য মনে করেন, সামনে যেহেতু নির্বাচন, ‘সুবিধাবাদী প্রগতিশীলরা' তাই এখন মাঝামাঝি অবস্থানে আছেন৷ তবে আওয়ামী লীগ যে ভোটের রাজনীতির হিসেব করছে, তাতে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সম্পর্ক তাদের খুব একটা কাজে আসবে বলে তিনি মনে করেন না৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্তে প্রগতিশীল ও সুশীল সমাজের অনেকেই আওয়ামী লীগের প্রতি বিরূপ হয়েছেন৷ কিন্তু তাদের সামনে আসলে বিকল্প নেই৷''

তবে সৈয়দ আবুল মকসুদের মতে, যে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির কথা বলে আওয়া্মী লীগের জন্ম, যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা দলটির সংবিধানে লেখা আছে, তা থেকে দলটি কিছুটা সরে গেছে৷ ফলে তিনি মনে করছেন, আদর্শিক বিচ্যুতির পাশাপাশি প্রগতিশীলদের সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রাজনীতি করার দাবি করা দলটির৷

আবেদ খান

সম্প্রতি পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন এবং হেফাজতের দাবির মুখে হাইকোর্ট প্রাঙ্গন থেকে ভাস্কর্য সরিয়ে নেয়ার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকেই প্রতিবাদমুখর হয়েছেন৷ সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মীরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন৷ তাঁদের কথা কানে তোলেনি সরকার৷ বরং এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা একরকম হেফাজতের পক্ষই নিয়েছেন৷ এছাড়া সম্প্রতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের হেফাজতের তোপের মুখে পড়ার বিষয়েও অসন্তোষ দেখা গেছে সুধী সমাজে৷

প্রবীণ সাংবাদিক আবেদ খান মনে করেন, ধর্মের রাজনীতি গ্রাস করে ফেলেছে রাজনীতির ধর্মকে৷ ধর্মভিত্তিক রাজনীতির দিকে ঝোঁকা এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা৷ বিশ্বের অনেক দেশেই ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রভাব পড়েছে৷ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও তাই হচ্ছে৷ তাই সেই পরিবর্তনের ধারার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের রাজনীতিতেও৷ তাঁর মতে, আওয়ামী লীগের জায়গায় অন্য দল হলেও একই কাজ করত৷ তবে তিনি মনে করেন, আদর্শিক এই বিচ্যুতি না ঘটলে আওয়ামী লীগের ক্ষতি হতো না৷

আবেদ খান বলেন, ‘‘ভোটের রাজনীতিতেও (আওয়ামী লীগের) এই পরিবর্তন দরকার ছিল না৷ এতে সরকারের দুর্বলতা প্রতীয়মান হচ্ছে৷ তাদের (ইসলামপন্থিদের) ভোট কখনো আওয়ামী লীগ পাবে না৷''

আবেদ খান মনে করেন, প্রগতিশীলদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে এবং এই দূরত্ব সাময়িক নয়৷ তাঁর মতে, ইতিহাস বলে এমন দূরত্ব কখনোই সাময়িক হয় না৷ আফগানিস্তান ও ইরানের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এর রাজনৈতিক প্রভাব যেমন আছে, সামাজিক প্রভাবও আছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য