আধুনিক দাসপ্রথা! – DW – 20.10.2015
  1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আধুনিক দাসপ্রথা!

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২০ অক্টোবর ২০১৫

গৃহকর্মীদের কাজ এখনো প্রাতিষ্ঠানিক বা আইনি স্বীকৃতি পায়নি বাংলাদেশে৷ তাই আজও তাঁরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, মজুরি পাচ্ছেন কম৷ এঁদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো শ্রমঘণ্টা নেই, নেই ইচ্ছামত কোথাও যাওয়ার অধিকার৷

https://p.dw.com/p/1Gdus
Haushaltshilfen in Indien
ছবি: DW/M. Krishnan

ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে এখন ২৫ লাখ গৃহকর্মী বা গৃহশ্রমিক আছেন৷ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ-২০১০ অনুযায়ী দেশে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে এমন শিশুর সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজার, যাদের বয়স ৫-১৭ বছর৷ আর এর মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগই মেয়েশিশু৷

এর আগে ২০০৭ সালে ইউনিসেফ পরিচালিত জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশে ৪ লাখ ২০ হাজার গৃহকর্মী রয়েছেন৷ এর মধ্যে ঢাকা শহরে বিভিন্ন বাসায় নিয়োজিত আছে ১ লাখ ৪৭ হাজার, যাঁদের সবার বয়স ৭ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে৷

এছাড়া বাংলাদেশ লেবার ফোর্স সার্ভে-২০০৬ অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৫ বছরের ওপরে বয়সের গৃহকর্মীর সংখ্যা ৩ লাখ ৩১ হাজার৷ তাদের হিসেব মতে, মোট গৃহকর্মীদের শতকরা ৬০ ভাগেরও বেশি নারী৷

গৃহকর্মী নির্যাতন

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাবে, ২০১৩ সালে অন্তত ১০০ জন গৃহকর্মী বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ এঁদের মধ্যে ৩৮ জন শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন, যাঁদের মধ্যে ২০ জনের বয়স ৭-১২ বছরের মধ্যে৷ জানা যায়, শারীরিক নির্যাতনের পর মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের৷ অন্যান্য নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে ৩২ জনের৷ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩ জন আর ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩ জনকে৷ এছাড়া আত্মহত্যা করেছেন ৮ জন এবং গর্ভপাতকালে মৃত্যু হয়েছে একজনের৷ ওদিকে পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের শেষ চারমাসে ১০৭ জন গৃহকর্মী আত্মহত্যা করেছেন বাংলাদেশে৷

‘ডোমেস্টিক ওয়াকার্স রাইটস নেটওয়ার্ক'-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে শুধু ঢাকাতেই ৫৬৭ জন গৃহকর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে৷ সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশে গৃহকর্মীদের মধ্যে প্রায় ৩০ ভাগের বয়স ৬ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে৷ শুধু তাই নয়, এই শিশুদের মধ্যে ১৭ ভাগই কোনো না কোনো নির্যাতনের শিকার হয়৷

সাধারণভাবে বাংলাদেশের গৃহকর্মীরা প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করে প্রতি মাসে গড়ে ৫১০ টাকা মজুরি পান৷ তবে শহরাঞ্চল, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায়, গৃহকর্মীদের মাসিক মজুরি এক থেকে তিন হাজার টাকা৷

‘বাংলাদেশ ডোমেস্টিক ওয়ার্কার্স রাইট নেটওয়ার্ক'-এর প্রধান সিদ্দিকুর রহমান ডয়চে ভেলে জানান, ‘‘বাস্তব পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ৷ কারণ এ সব জরিপের তথ্য প্রধানত সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে নেয়া৷ আদতে কিন্তু অনেক ঘটনাই সংবাদমাধ্যমে আসে না৷''

তিনি জানান, ‘‘গৃহকমীরা নির্যাতনে নিহত হওয়া ছাড়াও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন৷ তাছাড়া যাঁরা আত্মহত্যা করছেন, তাঁরা মূলত যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েই আত্মহত্যা করছেন৷ অথচ অধিকাংশ নির্যাতন এবং হত্যার ঘটনা টাকা দিয়ে মিটিয়ে ফেলা হচ্ছে৷ আর গৃহকর্তা বাড়ির বাইরে গেলে, অনেকেই গৃহকর্মীদের বাসায় তালাবদ্ধ করে রেখে যান৷ এটাকে আধুনিক দাসপ্রথা ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না৷''

নেই সুরক্ষা আইন

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ২০১২ সালে সরকারের কাছে গৃহকর্মীদের জন্য ‘ডোমেস্টিক ওয়ার্কার রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড প্রটেকশন অ্যাক্ট' নামে একটি আইনের খসড়া প্রস্তাব করে৷ এরপর দেশের সর্বোচ্চ আদালত একটি সুরক্ষা আইন করারও নির্দেশ দেয়৷ কিন্তু এখনো পর্যন্ত সরকার সেই আইন করেনি৷ প্রস্তাবিত আইনে অবশ্য গৃহশ্রমিকদের কর্মঘণ্টা, বেতন কাঠামো, সুরক্ষা সব কিছুর কথাই বলা আছে৷

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ লেবার স্ট্যাডিজও (বিলস) কাজ করছে৷ তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, গৃহকর্মীদের শ্রম আইনের অধীনে নিয়ে আসা৷ সেটা সম্ভব হলে, তাঁদের জন্য সুরক্ষা আইন নিয়েও এগোনো যাবে৷ সিদ্দিকুর রহমান জানান, ‘‘বাংলাদেশ ডোমেস্টিক ওয়ার্কার্স রাইট নেটওয়ার্ক বিলস-এরই একটি নেটওয়ার্ক৷ আমরা চেষ্টা করছি গৃহশ্রমিকদের সবাইকে এই নেটওয়ার্কের আওতায় এনে সংগঠিত করতে৷''

এদিকে সরকার ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা ২০১০' নামে একটি নীতিমালার খসড়া নিয়ে কাজ করছে৷ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইল শিপার গত মাসে সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘‘চলতি বছরেই এই নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে৷ ফলে গৃহকর্মীদের জন্য আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী শোভন কাজ, নিরাপত্তা, নিয়োগপত্র প্রদান, ন্যূনতম বয়স, মজুরি নির্ধারণ, ছুটি ও মাতৃত্বকালীন ছুটির অধিকার প্রদানের মতো বিষয়গুলোর সুরাহা হবে৷''

পেশার আইনি স্বীকৃতি

এদিকে মজুরি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক বিচারক ইখতেদার আহেমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গৃহকর্মীদের সুরক্ষা দিতে হলে সবার আগে তাঁদের কাজকে আইনি স্বীকৃতি দিতে হবে৷ আইন করে এটাকে একটি পেশা হিসেবে ঘোষণা করতে হবে৷ আর সেই আইন যদি হয়, তাহলে প্রচলিত আইনেই তাঁরা ন্যূনতম মজুরি, ক্ষতিপূরণ, আইনি সহায়তাসহ অন্যান্য সুবিধা পাবেন৷ এমনকি তাঁরা তখন ট্রেড ইউনিয়নও করতে পারবেন৷''

তাঁর কথায়, ‘‘শুধু নীতিমালা কোনো আইন নয়৷ নীতিমালা শুধু ‘গাইড লাইন' হিসেবে কাজ করে৷ একমাত্র আইন হলে সেই আইনের আলোকে নীতিমালা কার্যকর করা যায়৷''

গৃহকর্মীকে নির্যাতনের কোন ঘটনা আপনি কী জানেন? তাহলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য