করোনার বিদায় সংবর্ধনা? – DW – 21.08.2020
  1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনার বিদায় সংবর্ধনা?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২১ আগস্ট ২০২০

বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সবই খুলে গেছে৷ সেপ্টেম্বরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও খুলে দেয়ার প্রস্তুতি চলছে৷ অথচ করোনার সংক্রমণ কিন্তু কমছে না৷ বরং বাড়ছে৷ কিন্তু টেস্ট কমিয়ে দেয়া হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/3hIhG
ছবি: picture-alliance/Xinhua News Agency

মৃত্যুহারও অন্তত এক মাস ধরে একই রকম আছে৷ পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে৷ স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে নানা কথা হলেও তা লোকজন তেমন মানছেন না৷ আর গণপরিবহণে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় পরিবহণ মালিকরা এখন বাস বোঝাই করে যাত্রী নেয়ার অনুমতি চাচ্ছেন৷ যদিও বাস্তবে তা-ই নিচ্ছেন৷ ভাড়া নিচ্ছেন অর্ধেক সিট খালি রাখার সেই পুরনো শর্তে দ্বিগুণ৷ টেস্ট কমানোর পর করোনা হাসপাতালও কমিয়ে দিতে চাইছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশে ভ্যাকসিন লাগবে না৷ করোনা এমনিতেই চলে যাবে৷ সংক্রমণ অনেক কমে গেছে৷’’

করোনাকে বাংলাদেশে ‘বিদায় সংবর্ধনা’ দেয়ার সব আয়োজনই যেন সম্পন্ন৷ তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় বিদায় সংবর্ধনা দিতে পারে, কিন্তু করোনা কি বিদায় নেবে?

এরইমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা ব্রিফিং বন্ধ হয়ে গেছে৷ জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি অবশ্য এর বিরোধিতা করেছে৷ এখন শুধু সংবাদবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় স্বাস্থ্য অধিপ্তরের ওয়েব সাইটে৷ তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবারও ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে করোনায় মারা গেছেন ৪১ জন৷ আর এ পর্যন্ত করোনায় মোট মারা গেছেন তিন হাজার ৮২২ জন৷ ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ৫৯টি নমুনা পরীক্ষা করে দুই হাজার ৮৬৮ জন শনাক্ত হয়েছেন৷ এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছেন দুই লাখ ৮৭ হাজার ৯৫৯ জন৷

আমাদের সামনে বিপর্যয় অপেক্ষা করছে: বিএমএ মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী

বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম রোগীর মৃত্যু হয় গত ১৮ মার্চ, প্রথম রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত ৮ মার্চ৷ এখন পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৪ লাখ সাত হাজার ৫৫৬টি৷

বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৪ শতাংশ এবং এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৪৬ শতাংশ৷ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থ হয়ে ওঠার হার ৫৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ৷বর্তমানে কোয়ারান্টিনে আছেন ৪৭ হাজার ৭৬৪ জন৷ আইসোলেশনে আছেন ৬৫ হাজার ৩৬ জন৷

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যই বলছে বাংলাদেশ এখনো করোনা কমার কোনো লক্ষণ নেই৷ বরং টেস্ট কম করার পরও সংক্রমণ বাড়ছে৷ এখনো নির্ভরযোগ্য জরিপ হয়নি৷৷ অ্যান্টিবডি টেস্ট শুরু হয়নি৷ বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)-র মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী কিসের ভিত্তিতে বললেন যে বাংলাদেশ থেকে করেনা চলে গেছে আমরা তা জানি না৷ আমাদের কাছে বিজ্ঞানভিত্তিক কোনো তথ্য নেই যে বলবো করোনা কমছে৷ মন্ত্রীর মতো কথা বললে চলবে না৷ আমাদের কথা বলতে হবে তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে৷ আর সেজন্য যে গবেষণা প্রয়োজন তা এখানে হয়নি৷’’

বাংলাদেশে ছোট একটি গবেষণা হয়েছে৷ আইইডিসিআর এবং আইসিডিডিআর,বি করেছে৷ ঢাকায় ১২ হাজার মানুষের ওপর তারা গবেষণা করেছে৷ তাতে দেখা গেছে, ঢাকার শতকরা ৯ ভাগ মানুষ করোনায় আক্রান্ত৷ ঢাকার ১২ হাজার মানুষের মধ্যে জরিপ করে সিদ্ধান্তে আসা যায় না বলে মনে করেন এই চিকিৎসক৷

বাংলাদেশে ২৫ মার্চ থেকে করোনা প্রতিরোধে সাধারণ ছুটি দেয়া হয়৷ এরপর তা বাড়িয়ে বাড়িয়ে ৩১ মে পর্যন্ত করা হয়৷ তারপর সব কিছু ধীরে ধীরে খুলে দেয়া হয়৷ যদিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বহাল আছে৷

করোনা নিয়ে সবচেয়ে জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল পোশাক কারখানায়৷ বারবার নানা ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ সাধারণ ছুটি প্রত্যাহারের পর করোনার হটস্পট চিহ্নিত করে লকডাউনের কাজও করা হয়৷ ঢাকার পূর্ব রাজাবাজার এবং ওয়ারীসহ ঢাকার বাইরে কয়েকটি এলাকায় ঢাকঢোল পিটিয়ে ২১ দিনের লকডাউন করা হলেও তার ফল অজানা৷ আর এখন সেটাও করা হচ্ছে না৷

আমাদের যখন যেটা করা প্রয়োজন করিনি, করেছি উলটোটা: ডা. লেনিন চৌধুরী

ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘সব কিছু স্বাভাবিক হয়নি, স্বাভাবিক করা হচ্ছে নির্দেশ দিয়ে৷ আমাদের কাছে করোনা কমার কোনো তথ্য নেই৷ আমরা করোনায় শুধু উল্টো পথে নয়, আমাদের সামনে বিপর্যয় অপেক্ষা করছে৷ শীত আসছে৷ পরিস্থিতি কী হয় বলা যায় না৷’’

করোনা ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কোনো মতামত নেয়া হচ্ছে না৷ তারা কোনো মতামত দিলে তা উপেক্ষা করা হচ্ছে-এমন অভিযোগও রয়েছে৷ জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটিকে নামে মাত্র রাখা হয়েছে৷ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন আমলারা৷ ১৮ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নতুন একটি কমিটি করেছে যার নাম ‘করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ গ্রুপ’৷ এই কমিটিতে কোনো চিকিৎসক বা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নেই৷ সবাই আমলা৷

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী মনে করেন, ‘‘করোনা নিয়ে এ পর্যন্ত যতগুলো সিদ্ধান্ত হয়েছে তার কোনোটিই সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়নি৷ আমাদের যখন যেটা করা প্রয়োজন সেটা করিনি৷ করেছি উল্টোটা৷’’

তিনি বলেন, ‘‘গবেষণায় দেখা গেছে শুধু ঢাকায় করোনা সংক্রমিত রোগী ১৮ লাখ৷ তাহলে সারাদেশে কত? আমি ধারণা করি এখন টেস্ট কমিয়ে রোগী কম দেখানোর একটা প্রবণতা আছে৷ কিন্তু তাতে কি করোনা দূর হবে?’’
তার মতে, কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নেয়ায় বাংলাদেশে করোনা প্রলম্বিত হবে৷ পৃখিবীর বিভিন্ন দেশে করোনা পিক-এ গিয়ে তারপর নেমে এসেছে৷ কিন্তু বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে সংক্রমণ একই আছে, কমছে না৷ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে৷ এটা বিপর্যয়ের দিকে যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন৷