আংশিকভাবে কাজে ফিরেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা, কেমন আছে আরজি কর?

এতদিন ধরে এই বিক্ষোভস্থলে বসে থাকতেন জুনিয়র ডাক্তাররা৷ নারী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা৷ প্রতিদিন বিক্ষোভ দেখাতেন৷ পরে লালবাজারের কাছে একদিন এবং স্বাস্থ্যভবনের কাছে বেশ কিছুদিন রাস্তায় বসে তারা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন৷ আরজি করের বিক্ষোভস্থল এখন ফাঁকা৷ জুনিয়র ডাক্তাররা জরুরি বিভাগে কাজে যোগ দিয়েছেন৷ বিক্ষোভস্থলের সামনে বসে আছেন পুলিশ কর্মীরা৷

অনেক বিভাগেই চোখে পড়েছে এই লম্বা লাইন৷ প্রচুর মানুষ এসেছেন ডাক্তার দেখাতে৷ তাদের লম্বা লাইন পড়ছে বিভিন্ন বিভাগের সামনে৷

জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে যোগ দেয়ার পর আরজি করে রোগীদের ভিড় আবার বেড়ে গেছে৷ দ্রুত রোগীদের ভিতরে ঢোকানোর কাজ চলছে৷

জুনিয়র ডাক্তারদের বিক্ষোভে বারবার এসেছে প্রতীকী মেরুদণ্ড৷ কখনো তাদের হাতে ছিল এই মেরুদণ্ড৷ কখনো তারা মেরুদণ্ডের ছবি এঁকেছেন৷ সেরকমই একটা ছবির পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে রোগী ও তাদের আত্মীয়রা৷

রীনা হালদার জানিয়েছেন যে, তার মাথায় সিস্ট হয়েছিল৷ সঙ্গে সঙ্গে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গিয়ে অপারেশন করা হয়৷ তিনি খুব ভালো পরিষেবা পেয়েছেন৷ রীনা খুশি৷

বারাসত থেকে এসেছিলেন তুলসী ঘোষ৷ তিনি জানিয়েছেন, শরীরের রক্ত কমে যাওয়ায় আরজি করে ভর্তি হতে এসেছেন৷ এসে দেখলেন যে মেডিসিন ওয়ার্ডে মাত্র দুজন ডাক্তার আছেন৷ বহু মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন চিকিৎসার জন্য৷

কলকাতার বাগমারি থেকে আসে রঘুনাথ সাহার অভিজ্ঞতা, ‘‘আমি ডাক্তার দেখাতে এসছিলাম৷ ভালো পরিষেবা পেয়েছি৷ কোনো সমস্যা হয়নি৷’’

সুমন পাল মধ্যমগ্রামে থাকেন৷ তিনি জানিয়েছেন, তার মা ডিমেনশিয়ার রোগী৷ অনেক আশা নিয়ে এসেছিলেন৷ কিন্তু এখানে এসে দেখেন, ডাক্তারের অভাব৷ কেউ সহযোগিতা করছে না৷ মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন তিনি৷

জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়ে দিয়েছিলেন, তারা কাজে যোগ দিলেও প্রতিবাদ চলবে৷ গত সপ্তাহান্তে মশাল মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন তারা৷ এই মশাল মিছিল শুরু হলো হাইল্যান্ড পার্ক থেকে৷ শেষ হলো শ্যামবাজারে৷

হাইল্যান্ড পার্ক থেকে শ্যামবাজারে যে পথ ধরে মশাল মিছিল এলো, তার দূরত্ব ৪২ কিলোমিটার৷ গোটা পথে সারারাত মানুষ দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিবাদ করলেন৷ জুনিয়র ডাক্তাররা তো ছিলেনই, তাছাড়া ছিলেন সিনিয়র ডাক্তার, সাধারণ মানুষ, তারকারাও৷

মাঝখানে ঝড়-বৃষ্টিও হয়৷ কিন্তু তাতেও মানুষ কোথাও যাননি৷ বরং স্লোগান বদলে যায়৷ সকলে বলতে শুরু করেন, ‘আসুক যত বৃষ্টি ঝড়/জাস্টিস ফর আরজি কর’৷ পরে বৃষ্টি থেমে যায়৷ মশাল তার গন্তব্যের দিকে যেতে থাকে৷

তাদের চলতে অসুবিধা হয়৷ লাঠি নিয়ে, ওয়াকার নিয়ে হাঁটেন৷ তাসত্ত্বেও প্রতিবাদে সামিল এই বয়স্ক মানুষরাও৷ সব বয়সের সব শ্রেণির মানুষের এই সম্মিলিত প্রতিবাদের জোরেই তো কেঁপে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ৷

মশাল হাতে নিয়ে এগোচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা৷ কিছুটা দূর পরপর সেই মশাল হাতবদল হচ্ছে৷ নতুন মানুষের হাতে উঠছে মশাল৷ মশাল তো একটা প্রতীক, আসলে, এভাবেই প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে যাচ্ছে এক মানুষ থেকে আরেক মানুষে৷ এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে৷

রাত আড়াইটে৷ শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়৷ নেতাজি সুভাষচন্দ্রের সেই বিখ্যাত মূর্তির আশপাশে মশাল জ্বলছে৷ একটু দূরেই আরজি কর৷ যেখানে এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার ন্যায় পাওয়ার জন্য পথে নেমে প্রতিবাদ করছেন হাজার হাজার মানুষ৷ সেই গভীর রাতে রাস্তার সোডিয়াম ভেপারের আলোর থেকে অনেক উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে মশালের আলো৷