প্রশ্নপত্র ফাঁস বাণিজ্য – DW – 03.10.2014
  1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রশ্নপত্র ফাঁস বাণিজ্য

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৩ অক্টোবর ২০১৪

বাংলাদেশে প্রশ্নপত্র ফাঁস একটি নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে৷ পাবলিক পরীক্ষা ছাড়াও বিসিএস-সহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/1DPPy
Bangladesch Schüler Schulkasse in Dhaka Prüfung
ছবি: picture-alliance/landov

আর এইসব ফাঁসের ঘটনা প্রতিরোধে নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও থামছে না ফাঁসের ঘটনা৷ চলতি বছরের এপ্রিল মাসে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের পর তা প্রতিরোধে আন্দোলনে নামেন দেশের বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ এবং শিক্ষার্থীরা৷ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল শহীদ মিনারের সামনে অনশন করেন৷ তখন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা অস্বীকার করে আন্দোলনের সমালোচনা করেন৷ পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে অন্তত দু'টি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ মেলে৷ ইংরেজি এবং গণিতের ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের কপিও উদ্ধার করতে সক্ষম হয় কমিটি৷ গত জুনে কমিটি সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়৷ কিন্তু এই ঘটনায় প্রশ্নপত্রসহ দু'জনকে আটক করা ছাড়া মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই৷ নেপথ্যে কারা রয়েছে তাও চিহ্নিত করা হয়নি৷

এর আগে ২০১৩ সালেও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার বাংলা দ্বিতীয় পত্র, এবং ইংরেজির প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ছিল৷ ওই ঘটনায় একজন শিক্ষকের দুই বছরের কারাদণ্ড হলেও তা নিয়ে বিস্তারিত কোনো তদন্ত হয়নি৷ শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে পাত্তা দেয়নি৷

এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষ সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে ঘটেছে অভিনব ঘটনা৷ মোবাইল ফোনসহ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরীক্ষার হল থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তার উত্তর বাইরে থেকে পাঠান হয়৷ তবে ফাঁসের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কম করে হলেও ৪০ জনকে আটক করা হয়েছে৷ এই চক্রে পরীক্ষার্থী ছাড়াও অভিভাবক, ছাত্র এবং শিক্ষকরা জড়িত বলে প্রমাণ মিলেছে৷ তারা রীতিমতো একটি সিন্ডিকেট করে এ কাজ করে৷ আর গ্রাহক সংগ্রহ করা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্যক্তিগত পরিচয় এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে৷

চাকরির জন্য প্রতিযোগিতামূলক নানা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসেও পিছিয়ে নেই জালিয়াত চক্র৷ ২০১২ সালে ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পাঁস হওয়ায় লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়৷ ২০১৩ সালের জুন মাসে রাষ্ট্রায়ত্ব অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়৷ একই বছর এপ্রিলে সরকারি প্রাইমারি স্কুলে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়৷ এই ঘটনায় গ্রেফতার হয় ২৮ জন৷

পাবলিক পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে সরকারি ছাপাখানা বিজি প্রেসের কতিপয় কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতাও খুঁজে পাওয়া গেছে৷ গত মে মাসে এক কর্মচারীকে গ্রেফতারও করা হয়৷ তিনি হাতে লিখে প্রশ্নপত্র বাইরে নেয়ার সময় ধরা পড়েন৷ এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতরা কোটি কোটি টাকা আয় করছেন৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন এবং উত্তরের জন্য একজনের কাছ থেকে হয়েছে তিন লাখ টাকা৷ পুলিশের তদন্তে দেখা গেছে, বিজি প্রেসের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হামিদুল ইসলাম এবং মোস্তফা কামাল প্রশ্নপত্র ফাঁস ব্যবসায় কোটিপতি হয়েছেন৷ তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দুই কোটি আট লাখ টাকা পাওয়া গেছে৷ তারা দু'জনই ঢাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও গাড়ির মালিক৷

Bangladesch Schüler Schulkasse in Dhaka Prüfung
বাংলা দ্বিতীয় পত্র, এবং ইংরেজির প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ছিলছবি: picture-alliance/landov

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা পাবলিক পরীক্ষাসহ ভর্তি এবং চাকরির প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের কয়েকটি ঘটনা তদন্ত করছি৷ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছি৷ কিন্তু সমস্যা হল এরা এত কৌশলে কাজ করে, যে এক স্তরের লোকজনকে আরেক স্তরের লোকরা চেনে না৷ তবে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে এর সঙ্গে জড়িতরা প্রভাবশালী৷ কিছু কোচিং সেন্টারও এর সঙ্গে জড়িত৷ এর এই চক্রগুলো কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে৷'' তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের তদন্ত যেভাবে এগোচ্ছে তা পেছনের লোকজনকেও চিহ্নিত করা সম্ভব হবে৷''

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম আরেফিন সিদ্দিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এবার আগে থেকেই সতর্ক থাকায় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র জালিয়াত চক্রের ৩৮ জনকে আগেই আটক করা সম্ভব হয়েছে৷ আর হাতেনাতেও পরীক্ষার হলে বেশ কয়েকজনকে আটক করা গেছে৷ এখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরবর্তী কাজ করছে৷'' তিনি আরও বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পদ্ধতিতে এমনভাবে পরিবর্তন আনা হবে যাতে প্রশ্নপত্র ফাঁস করেও কোন কাজ না হয়৷'' অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘‘পাবলিক পরীক্ষাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করতে হবে৷ নয়তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা জায়গায় অযোগ্যরা ঢুকে পড়বেন৷ মেধাবীরা হবেন বঞ্চিত৷ আর এ জন্য পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে৷''

পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি প্রধানত চার দফা সুপারিশ করেছে৷ কমিটি বলেছে, বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র তৈরির কাজ করতে হবে৷ একাধিক সেট প্রশ্ন অনলাইনে পরীক্ষার দিন সকালে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে পাঠাতে হবে৷ স্থানীয়ভাবে প্রিন্টারে ছাপিয়ে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন বিতরণ করা হবে৷ আর প্রশ্নপত্র যেন অনলাইনে পরীক্ষার দিন সকালের আগে তা খোলা না যায় এমন তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে৷

পাঁচ কিংবা দশ সেট প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে পরীক্ষার দিন সকালে লটারির মাধ্যমে সেট নির্ধারণ করে পরীক্ষা নিতে বলা হয়েছে৷ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পর্যায়ক্রমে সুপারিশ বাস্তবায়ন করা কথা বলেছেন৷ তবে প্রাথমিকভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে একটানা পরীক্ষা নেয়ার কথা বলেছেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য