ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ের বিশেষ যত্ন

মানুষের শরীরে কোনো সমস্যা হলে, তা প্রথম জানিয়ে দেয় ব্যথা৷ তবে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে রক্ত সঞ্চালনের অসুবিধার কারণে তাদের অনুভূতি অনেক সময় কাজ করে না, তাই নানা দুর্ভোগের শিকার হতে হয়৷ বিশেষ করে পায়ে সংক্রমণ ঘটলে তা বেড়েই চলে, তাই চাই নিয়মিত চেকআপ৷ প্রতিদিন রাতে একবার খুব ভালো পা,পায়ের তলা ভালো করে লাইট দিয়ে পরীক্ষা করা দরকার৷ পায়ের তলায় কোথাও ফুলে বা ফেটে গেছে কিনা ভালোভাবে খেয়াল করতে হবে৷

কুসুমগরম পানিতে পা ৩ থেকে পাঁচ মিনিট ডুবিয়ে রেখে তুলে ফেলতে হবে৷ পানিতে কোনো ওষুধ দেওয়া হবে কিনা বা কি দেওয়া হবে, সে ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই ভলো৷ তবে পায়ে কাটা বা বেশি ফাটা থাকলে ফুটবাথ না করাই ভালো৷ এতে ফল উলটো হতে পারে৷

ফুটবাথ করার পরে নরম তোয়ালে দিয়ে পা দুটোকে ভালোভাবে মুছে নিন৷ পায়ে আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে মুছে নেবেন৷ তবে হটফ্লাশ, হেয়ারড্রায়ার বা সূর্যের আলোতে কোনোভাবেই শুকানো উচিত নয়৷

পায়ের আর্দ্রতা বজায় রাখতে একটু বেশি তৈলাক্ত ক্রিম ব্যবহার করাই ভালো৷ পা কাটা, ফাটা বা ছিঁড়ে ব্যকটেরিয়া ছড়িয়ে গেলে ক্রিম তা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কমায়৷

পায়ের নখ কাটার সময় খুবই সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত৷ বেশি ধারালো কাঁচি বা নেলকাটার দিয়ে নখ না কাটাই ভালো৷ তবে পায়ের নখের দু’পাশে সামান্য গোল করে বা সোজা করে কাটাই শ্রেয়৷ পায়ের নখের কোনো অসুখ হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত৷

হাত, পায়ের ত্বক শুকিয়ে গেলে বা কোনো অনুভূতি না হলে নিজে এতে হাত না দিয়ে সাধারণ পেডিকিওর করাবেন না বরং পেডিকিওরের জন্য সরাসরি ডাক্তার বা মেডিকেল বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়াই ভালো৷

সঠিক মাপের জুতো পরবেন, টাইট বা বেশি বড় জুতো নয়৷ সবচেয়ে ভালো খাঁটি চামড়ার জুতো পরা৷ নারী বা পুরুষ সকল ডায়াবেটিস রোগীর জন্যই হাইহিল একেবারেই নিষিদ্ধ৷ বড়জোর ৩ সেন্টিমিটার উঁচু হতে পারে জুতো৷ একদম খালি পায়ে ঘরের ভেতরও হাঁটা ঠিক নয়, কারণ এতে মাটিতে পড়ে থাকা অনেক কিছু থেকে পা সংক্রমিত হতে পারে৷

জুতোর আবরণের ভেতরে যেসব উপাদান দেওয়া থাকে, তা থেকেও পা সংক্রমিত হতে পারে৷ তাই নিয়মিত জুতো ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে৷ তাছাড়া জুতো কেনার সময় ডায়াবেটিস রোগীরা বিকেল বেলায় কিনবেন, কারণ সারাদিন পা সামান্য ফোলা থাকতে পারে তাই পরে তা সঠিক মাপের নাও হতে পারে৷ সেজন্য বিকেলের মাপই সঠিক মাপ৷ তবে তা শুধু ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে নয়, অন্যদের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে৷

অতীতে বলা হতো, ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষত ও আক্রান্ত হাড় সাধারণত ভালো হয় না৷ হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ভেনৎসের অভিজ্ঞতা ভিন্ন৷ তিনি বলেন, সব নিয়ম মেনে চললে ধীরে ধীরে হলেও অস্থি ভালো হতে পারে৷ ডাক্তার রেনাটে ভোলান্সকিও তাঁর সাথে একমত৷ পায়ের যত্নে তাঁর পরামর্শই এখানে তুলে দেওয়া হলো৷

ডায়াবেটিস রোগীদের সুইমিং পুলে না যাওয়াই ভালো৷ কারণ সুইমিং পুলে ব্যবহার করা হয় নানা রকম প্লাস্টিকের স্যান্ডেল বা জুতো, যা থেকে বিভিন্ন সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে৷ শরীরের হৃদযন্ত্র থেকে যে অঙ্গের দূরত্ব বেশি, সে অঙ্গের ক্ষত শুকাতে সময় তত বেশি লাগে৷ বলা বাহুল্য, ডায়বেটিস রোগীর ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া আরও ধীর গতিতে হয়৷